• শিরোনাম

    অবহেলায় শিশুর কোমলতা পরিণত হতে পারে হিংস্রতায়: রাবেয়া জাহান তিন্নি

    | সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

    অবহেলায় শিশুর কোমলতা পরিণত হতে পারে হিংস্রতায়: রাবেয়া জাহান তিন্নি

    প্রতিটি ‍শিশুর মাঝে রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা আর মেধা। কোমলমতি শিশুদের যেভাবে পরিচালনা করা হবে তারা সে ভাবেই পরিচালিত হবে। তাদেরকে যা বোঝানো হবে , যা শেখানো হবে , ভবিষ্যৎতে তারা আমাদের তাই ফেরত দিবে। একটা শিশু ধনীর দুলালই হোক অথবা পথের শিশুই হুক তার মন থাকে স্বচ্ছ, নিষ্পাপ আর পবিত্র। একটা শিশুর সৃজনশীল ক্ষমতাও থাকে অনেক বেশী। অথচ পথশিশুদের প্রতি আমাদের অবহেলা অনাদর আর ঘৃণা এই সৃজনশীলতাকে পরিণত করে হিংস্রতায়।

    সম্পর্কের বাধনে আমরা এতটাই আচ্ছন্ন থাকি যে এর বাইরে আর কোনো কিছু চিন্তা করা হয় না। অথচ এই রক্তের বন্ধনই আমাদের এক সময় সবচেয়ে কষ্ট দেয়। নিজের সন্তানের মতো হয়তো অন্যদের ভালবাসা যায় না। কিন্তু অন্যের সন্তানকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা ,  টাকার বিনিময়ে তাদের সাথে অমানবিক আচরন করা, সুযোগে তাদের দিয়ে  দ্বিগুন, তিনগুন কাজ করিয়ে নেওয়া কোনোভাবেই মানুষের কাজ হতে পারে না। অথচ  এই আচরনগুলো আমাদের সমাজের অনেক মানুষই করছে।

    অনেকেই মনে করে , টাকার বিনিময়ে কর্মরত শিশুদের সাথে ভালো আচরন করলে তারা মাথায় চড়বে। তাই তাদেরকে সবসময় ধমকের সাথে রাখতে হবে আর প্রয়োজনে মারধোর করতে হবে; তবেই তাদের নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। অথচ একটি শিশুর সাথে একটু ধৈর্য ধরে ভালো আচরণ করলে তাকে একটি সুসভ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব । আর যদি একটি মেধাবী শিশুর পেছনে কিছুটা শ্রম দেওয়া যায় তাহলে তা সমাজ , দেশ ও জাতির জন্য যেমন এক বিরাট  প্রাপ্তি , তেমনি ঐ মানুষটির জন্য এক বিশাল গর্ব যার হাতে একটি পথের শিশু হয়ে উঠে দেশের সম্পদ।

    নিজের সন্তানকে সবাই ভালবাসে। যে পৃথিবীর সবচেয়ে নিৎকৃষ্ট মানব সে ও নিজের সন্তানকে ভালবাসে। সন্তানের ভাল ভবিষৎতের জন্য ঘুষ খাচ্ছে, অন্যের সম্পদ লুট করছে, আরও অনেক জঘন্যতম কাজও করছে। আবার কেউ কেউ অন্ধের মতো সন্তানকে ভালবাসছে। নিজে অনাহারে থেকে সন্তানকে খাওয়াচ্ছে, সন্তানের সামান্যতম কষ্টে চরমভাবে বিচলিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ এই সন্তানই বড় হয়ে কত অদ্ভুত আচরণ করে। মা-বাবার এই ভালবাসাকে তারা দুর্বলতা ভাবে , আর এই দূর্বলতার সুযোগে কিছু সন্তান বাবা-মাকে কতই না কষ্ট দিয়ে থাকে। স্তন্তানদের ভরপুর  করতে গিযে বাবা-মা  নিজেদের এতটা শূণ্য করে যে সন্তানের মুখাপেক্ষী হওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায়ই থাকে না। আর তখনই সন্তানরা করে অবহেলা। সেই অবহেলার ভার সইতে না পেরে অনেক বাবা-মার আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে।

    আমাদের প্রতিটি কাজের পেছনে রয়েছে স্বার্থ । নিজের সন্তানকে ভালবাসার পেছনেও রয়েছে  স্বার্থ । আর সেই স্বার্থটা হচ্ছে নিজের ভবিষৎকে নির্ভরযোগ্য করা । কিন্তু আধুনিক সভ্যতা মানুষকে এতটা যান্ত্রিক এবং আত্মকেন্দ্রিক করেছে যে  মানুষ নিজের বাইরে আর কারও কথা ভাবার সুযোগই পায় না, এমনকি নিজের বাবা-মায়ের কথাও না; আর এই আত্মকেন্দ্রিকতার শিক্ষা একজন শিশু শৈশব থেকেই পেয়ে যায়।

    এই যান্ত্রিকতা, স্বার্থপরতা আর একাকিত্ব থেকে মুক্তির একটাই উপায়; আর তা হচ্ছে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করা। নিজের ভালবাসার গন্ডিকে প্রসারিত করে স্বার্থহীনভাবে যদি একটি পথ শিশুকে আপন করে নেওয়া যায় তবে তার সুফল এই জগতেই পাওয়া যাবে । কারন যে ভালবাসা নিঃস্বার্থ তার অনুদান তো স্রষ্টা নিজেই দিয়ে থাকেন।

     

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    সবটুকুই সত্য

    ১৮ জুন ২০১৭

    বঙ্গ জননী

    ১৩ আগস্ট ২০১৭

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম