• শিরোনাম

    ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক প্রবাদ-প্রবচন

    | মঙ্গলবার, ০৭ মার্চ ২০১৭

    ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক প্রবাদ-প্রবচন

    লোকসাহিত্যের একটি সুবিস্তৃত ধারণা আছে। লোকসমাজের ব্যাপ্তির মতই তার বিশালতা। লোকসমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে এর অবস্থান। অজ¯্র শাখা প্রশাখায় বিস্তৃতি। লোকসাহিত্য লোকসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। লোকজীবন থেকে উদ্ভুত বলেই এর নামকরণ হয়েছে লোকসাহিত্য। লোককাহিনী, প্রবাদ, ছড়া, লোকগীতিকা, লোকসংগীত, হেয়ালী বা ধাঁধাঁ, লোকবিশ্বাস এবং লোক বিদ্যা হচ্ছে লোকসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তথাপি লোকসংস্কৃতির মতই লোকসাহিত্যের চূড়ান্ত দ্রাঘিমা নির্ধারণ প্রায় অসম্ভব। লোকসাহিত্যে নিজস্ব সুর আছে এবং আছে নিজস্ব ভাষা ও ছন্দ। তবে সব কিছুই সেই প্রান্তিক পর্যায়ের সৃষ্টিশীল মানুষদের নিজস্ব জীবন দর্শনে মোড়ানো। ফলে আপাতঃ সহজ সরল লোকসাহিত্যে কঠিন তত্বকথাও খুঁজে পাওয়া যায়। এই তত্ত্বকথা যাপিত জীবনে নানা ঘাত প্রতিঘাত আর বাস্তব অভিজ্ঞতারই প্রতিধ্বনি।

    লোকসাহিত্যের আশ্রয় হচ্ছে প্রাকৃত উৎসের লোকভাষা। যে ভাষা এখনও গ্রাম জনপদে নীরবে প্রবাহিত হচ্ছে। অকৃত্রিম সারল্যে স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তির মাধ্যমে সে ভাষা নিরন্তর পরিশীলিত ভাষাকে প্রাণ যুগিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, একটি ভাষা তার স্বাতন্ত্র্যিক অস্তিত্ব বজায় রাখে তার লোকসংস্কৃতি ও লোকসাহিত্যের সঙ্গে সম্পর্কের দ্বারা।

    লোক ভাষার মূলসত্তাটি ধরা পড়ে লোকসাহিত্যে। তাই লোকভাষা ও লোকমানসের প্রতীক এই লোকসাহিত্য। যুগ যুগ ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে রচিত বলে লোকসাহিত্যে জাতীয় চেতনা ও মানস সুরটি অকৃত্রিম ভাবে ধরা পড়ে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে লোকসাহিত্যের মূল্য অনেক বেশি।

    বাংলা লোকসাহিত্যের সমৃদ্ধ শাখা হচ্ছে লোক প্রবাদ-প্রবচন গুলো। নানা বিষয়ে নানা প্রকৃতির অজস্র প্রবাদ প্রবচন লোকসমাজে প্রচলিত। নেহায়েত কথার কথা নয়- এসব প্রবাদ প্রবচনের তাৎপর্যপূর্ণ সাহিত্য মানও রয়েছে। তার চেয়ে বেশি আছে জন মানুষের জীবন চেতনার অকৃত্রিম রূপ।

    প্রবাদ-প্রবচন গুলোর আবেদন কখনো চিরন্তন সত্য রূপে আবার কখনো সাধারণ অর্থেই প্রচলিত। জনসমাজে প্রাত্যহিক অভিব্যক্তির প্রকাশে এগুলোর গুরুত্ব অত্যধিক। হাজার বছর ধরে বহমান মানব সমাজে জীবনের সারসত্য রূপে লোক ভাষার স্থানিক মহিমায় প্রবাদ প্রবচনগুলো টিকে আছে। এমন অনেক প্রবাদ আছে যা স্থানকালের সীমাকে অতিক্রম করে বিশ্বসমাজের সম্পদ রূপে পরিগণিত হয়েছে। তথাপি স্থানীয় প্রবাদ প্রবচনগুলোর গুরুত্বও কম নয়। ভাব ও ভাষায় স্থানীয় হলেও এগুলোর আবেদনও বিশ্বজনীন। বলা হয় প্রবাদ-প্রবচন যে কোন ভাষার লোক অভিজ্ঞতার মণিমঞ্জুষা, জাতির প্রতিবিম্ব, প্রতিচ্ছবি। জার্মানদের ধারণা- যে দেশ যেমন সে দেশের প্রবাদ প্রবচনও তেমন। আবার বলা হয় যে দেশের মানুষ যেমন প্রবাদ-প্রবচনও তেমন।

    প্রবাদ সম্পর্কে বাংলা ব্যবহারিক অভিধানে বলা হয়েছে ‘‘বহুকাল হতে প্রচলিত, উপদেশমূলক, জ্ঞানগর্ভ উক্তি, জনশ্রুতি, কিংবদন্তিকে প্রবাদ বলে। ”

    ১৩৬৭ সালে কলিকাতা থেকে প্রকাশিত প্রবাদ-প্রবচন সংকলনে বলা হয়েছে ‘‘প্রবাদ-প্রবচন ভাষার একটি বিশিষ্ট রূপ। আটোসাটো গড়ন, মৃদু-মন্দ গতি, চলনে ঝংকার, অভিজ্ঞতার নির্যাস, নিজস্ব বর্ণে উজ্জল, সংক্ষিপ্ত সরস প্রকাশ, লোক মানসের অভিব্যক্তি, বলামাত্র মনোহারী, এহেন বাক্যকে প্রবাদ বলে।”

    সত্যরঞ্জন সেন সম্পাদিত ‘‘ প্রবাদ রত্মাকর” (১৯৫৭) গ্রন্থে বলা হয়েছে জাতির প্রাণকেন্দ্রে যে বিরাট জ্ঞানব্যাপী প্রতিষ্ঠিত তাতে স্মরণাতীত যুগ হতে অসংখ্য উৎসমুখে বহির্গত হয়ে এবং বহুক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত হয়ে এসে যা কিছু একত্রে মিশেছে, তাদের একের সাথে অপরের কোন সংশ্রব নেই। আর সে সমস্তই প্রবাদ নামে চিহ্নিত হয়ে গেছে।” বাংলা প্রবাদ-প্রবচন সম্পর্কে ড. কাজী দীন মোহাম্মদ লিখেছেন ‘‘দুনিয়ার প্রত্যেক জাতির সাহিত্যে প্রাত্যহিক জীবনের কথাবার্তার ক্ষীপ্ত রসময় সংক্ষিপ্ত বাক্যের প্রচলন দেখা যায়, যা মানবজীবনের ভূয়োদর্শন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার ফসল, তাই প্রবাদ। মনের গভীর অনুভূতি হতে সমুৎপন্ন সহজ সরল বাক্য বিন্যাসকেই প্রবাদ বলা হয়। প্রবাদ-প্রবচনে একটি জাতির আত্মার সন্ধান পাওয়া যায়। প্রবাদ ভাষার এমন একটি অংশ যা ভাষাকে সতত জীবন্ত রাখে। কখনও কখনও ভাষার গতিপথও নির্দেশ করে। প্রবাদ-প্রবচনে খুঁজে পাওয়া যায় জাতির অকৃত্রিম লোকসত্তাকে। জাতি গঠনে যে মানস সর্বদা ক্রিয়াশীল।

    প্রবাদ-প্রবচনের উৎপত্তি ঘটে এক প্রকার সৌন্দর্য চেতনা থেকে। তাই এগুলোতে উপমার প্রাধান্য থাকে। সৌন্দর্য চেতনা থেকে উদগত বলেই হয়তো এগুলোর টিকে থাকার ক্ষমতাও অফুরন্ত। কালের করাল গ্রাস থেকে এগুলো বেঁচে থাকে হাজার বছর ধরে। রূপান্তরিত হয় বটে, তবে সহস্র বছরেও এগুলোর আবেদন ও ভাব বিলীন হয় না। সমাজে বহু বিচিত্র বিষয়ে প্রবাদ-প্রবচন চালু রয়েছে। ধর্মনীতি, সামাজিক, পারিবারিক বিষয়, পরিবেশ, কৃষি, ব্যক্তির সম্পর্ক এমনই বহু বিষয়ে প্রবাদ-প্রবচন প্রচলিত আছে। এগুলো কোন দেশকালের গ-িতে সীমাবদ্ধ নয়। সার্বজনীনভাবে মানব সমাজে এগুলো ছড়িয়ে পড়েছে।

    ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রান্তিক জনপদগুলোতেও বিপুল পরিমাণ লোক প্রবাদ-প্রবচন প্রচলিত আছে। একথা আমি উপলব্ধি করি ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিষয়ক একটি গবেষণাধর্মী লেখা তৈরী করতে গিয়ে। সে সময়ে আমি কয়েকজন গ্রাম্য লোকের সন্ধান পাই যারা সামান্য লেখাপড়া করেছেন কিন্তু আজীবন গ্রামে বসবাস করছেন। আধুনিক জীবন চেতনার প্রভাব তাদের মধ্যে খুব সামান্যই লক্ষ্য করা যায়। তারা তাদের এলাকায় সুপরিচিত তাদের লোক সংস্কৃতির নানা কর্মকা-ের জন্য। কেউ হয়ত মহররমের জারি গেয়ে সুনাম অর্জন করেছেন, আবার কেউ লোকসংগীত। কেউ আছেন গ্রামের আচার শালিসে নানা নীতি কথার উপস্থাপনের দ্বারা খ্যাতিমান, এদের সংগে সখ্যতা হবার পর থেকে আমি ‘‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া লোকসাহিত্য’’ নামে একটি ব্যক্তিগত ফাইল খুলি। বিভিন্ন সময়ে তাদের সংগে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমি যা জানতে পারি সেইগুলো লিখে আমি ফাইলে জমাতে শুরু করি। কিন্তু এক পর্যায়ে আমার মনে হয় আমি খুব বেশি গভীরে যেতে পারছি না। বিশেষ করে এখানকার লোকসমাজের গভীরে যারা বসবাস করেন, যারা আরও বেশি লোক ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতিকে নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনে ধারণ করেন। তখন আমি আমার কর্ম প্রতিষ্ঠান চিনাইর কলেজের পঞ্চাশ জনের মত শিক্ষার্থীকে লোকসাহিত্য সংগ্রহ বিষয়ে একটা ধারণা দেই।

    আমার মনে হয় এরা এদের সমাজের সেই মানুষটির কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে, যারা ব্যাপক লোক সংস্কৃতিকে বুকে আগলিয়ে বেঁচে আছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আমার ধারণার চেয়েও বেশি ফলাফল পেতে শুরু করি। তিতাস পাড়ের মোট ১৫/২০টি গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা আমার জন্যে বয়ে নিয়ে আসে অনেক কিছু। যার সুত্রধরে আমার পক্ষে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। আমি শিক্ষার্থীদের সংগৃহিত লোকসাহিত্যের উপাদান গুলোকে মূল্যবান তথ্য হিসেবে ধরে নিয়ে সে সব গ্রামে ঘুরে ঘুরে সাহিত্য উপাদান সংগ্রহ করার একটা রাস্তা খুঁজে পেয়ে গেলাম। সে ভাবেই বিগত পনের বছর কাজ করে নিজেকে লোকসাহিত্য সংগ্রহের একজন কর্মী হিসেবে ভাবতে পেরেছি। তবে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সংগ্রহের কাজটি আমি বন্ধ করিনি।

    কেন না এমন কিছু গ্রাম আছে যেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ব্যাপারটি আমার কাছে খুবই কঠিন মনে হয়েছে। একটা অদৃশ্য দূরত্ব অনুভব করেছি, যা হয়ত এই গ্রামেরই একটা ছেলে বা মেয়ের ক্ষেত্রে নেই। ফলে তারা সে সব মানুষদের থেকে অনায়াসে কিছু না কিছু তুলে আনতে পেরেছে।

    লেখা সংগ্রহের ক্ষেত্র ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার তিতাস পাড়ের ১৫/২০টি গ্রাম। তবে কিছু কিছু লেখা উপজেলার অন্য গ্রাম থেকেও সংগৃহিত হয়েছে। আবার নবীনগর, আশুগঞ্জ এবং সরাইল উপজেলার কিছু গ্রাম থেকেও লেখা সংগ্রহের কাজ করা হয়। তবে তিতাস পাড়ের গ্রামগুলো হচ্ছে আমাদের প্রধান অবলম্বন। গ্রামগুলো হচ্ছে চিনাইর, বাসুদেব, জারুলতুলা, উজানিসার, বৈষ্ণবপুর, পাইকপাড়া, ভাতশালা, চান্দি, দতাইসার, দুবলা, চাপুইর, কাজীর খলা, খেউয়াই, চান্দপুর, জগতসার, সুলতানপুর, গজারিয়া ও মাছিহাতা। আমার কর্ম প্রতিষ্ঠান চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজ উল্লিখিত গ্রামগুলোর মধ্যে অবস্থিত। ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন তাদের বাড়ি থেকে এসে ক্লাস সেরে আবার বাড়িতে ফিরে যায়। তাই তাদের গ্রামবাসীই বলা যায়। এদের দ্বারা এ সকল গ্রামের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া সম্ভব হয়। তাদের সঙ্গে আন্তরিক ভাবে আলাপ-আলোচনার সুযোগ পাওয়া যায়। আমার মধ্যে এ বিষয়ে কাজ করার একটা ব্যাপক প্রেরণার সৃষ্টি হয়। ফলে প্রায় পনের বছর উৎসাহের সঙ্গে কাজ করে একটা সন্তোষজনক সংগ্রহ তৈর করতে সক্ষম হই। আমার অন্যতম প্রেরণার উৎস হচ্ছে উপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণের কালজয়ী উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এ উপন্যাসে বর্ণিত জনসমাজ কার্যত লোকসাহিত্যে পরিপূর্ণ। উপন্যাসে সেই বিপুল লোকসাহিত্যের ধারণাও রয়েছে- যা আমাকে দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা।

    এভাবে দীর্ঘদিন লোকসাহিত্য সংগ্রহের পর কিছু স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় এবং লিটলম্যাগে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকসাহিত্য’ নামে আমার কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। সেগুলো স্থানীয় বিদগ্ধজন পাঠ করে আমাকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত জানান। আমি তাদের মতামত শ্রদ্ধার সথে বিবেচনা করেছি। সে বিদগ্ধ জনদের মধ্যে আছেন অধ্যক্ষ মিন্নাত আলী, অধ্যক্ষ খুরশেদুল ইসলাম, গবেষক মুহম্মদ মুসা, সাংবাদিক মনসুর কামাল, অধ্যাপক মু. আবুল কাশেম ভূইয়া, শিল্পী ফিরোজ আহমেদ, কবি জয়দুল হেসেন, মো. আলমগীর ভূইয়া ও কবি মিলি চৌধুরী প্রমুখ। অনেকে আমাকে লোকসাহিত্য সংগ্রহে সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছেন।
    …….বিশেষ করে এখানকার প্রবাদ প্রবচন গুলোর ভাষ্য থেকে অনুভব করেছি এ গুলো সুদীর্ঘ কালের সম্পদ। যা এ অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে আসছে। যে অতীত হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে, যে অতীতের জন্যে আমাদের সতত আক্ষেপ – সেই বিস্মৃত অতীতের সাক্ষ্য বহন করছে লোক সাহিত্যের এ উপাদান গুলো। প্রবাদ প্রবচনগুলোর ভাষা বৈশিষ্ট্য থেকে স্থানীয় ভাষা বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। বিশেষ করে স্থানীয় ভাষার যে স্বাতন্ত্র্য তা সহজেই এসব প্রবাদ-প্রবচনে ধরা পড়ে। কেন না এসব প্রবাদ প্রবচনে প্রচুর সংখ্যক স্থানীয় বা আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন-
    * বেইন্না বেলার মুডি সারাদিনের খুডি।

    * সিয়ানের কাম বিয়ানে নাদানের কাম মাদানে।
    * হাই মরছে আঘুনে-কুয়ান দিছে ফাগুনে।
    * খাডাইশ্যা কুত্তার আগুইন্যা পাদ।
    * গাইয়ে বাছুর লনা গোয়াইল্যার পেরেশানি।
    * ঈমানে আমান, বেঈমানে দুনিয়া তামান।
    * সাব দেখছিলাম না বাফের গোতে,
    সাব দেখাইছে পাডার মার পুতে।

    উল্লেখিত প্রবাদ-প্রবচনগুলোতে একটি চমৎকার স্থানীয় লোক পরিবেশের ধারণা পরিস্ফুট হয়ে উঠে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকভাষার চমৎকার ব্যবহারও আমরা এখানে লক্ষ্য করি। এসব প্রবাদ-প্রবচন স্থানীয় মানুষের আচার-অভ্যাস, রীতি-প্রথা, সম্পর্ক ও বিশ্বাসের বিষয়গুলো তুলে ধরে। সেই সাথে এগুলোতে ব্যবহৃত আঞ্চলিক ভাষাও আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

    সংগৃহিত বহু প্রবাদ-প্রবচনের ভাষাই শ্লিল নয়। অথচ এই বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই একটা সহজ সাধারণ অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কিছু প্রবাদ পাওয়া গেছে যেগুলো নতুন, বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও হৃদয়গ্রাহী। ধারণা করি এগুলো অত্র অঞ্চলের নিজস্ব সম্পদ। কিছু প্রবাদের পাওয়া গেছে স্থানীয় রূপ। এসব প্রবাদ-প্রবচন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের স্মারক বলা যায়।

    ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোন কোন গ্রামে প্রবাদকে বলে ‘নজির’ আবার মেয়েবা বলে ‘নজিরা’। যেমন- ফুলচং প্রামের লাকি আক্তার (বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী) লিখেছে নজিরা। কোথাও বলে ‘ডাকের কথা’ বা ‘মুরুব্বিরার কথা’। আবার স্থানীয় পরিভাষায় বলা হয় ‘কেমনে জানি মাইনসে ক’ বা ‘কেডা জানি কইছিল’ ইত্যাদি। কেউ কেউ ‘বচন’ও বলেছেন। তবে স্থানীয় ভাষায় ‘নজির’ নামকরণটি একটি শক্তিশালী ধারণা মনে হয়েছে। কেননা প্রতিটি প্রবাদে আছে এক একটি নজির বা দৃষ্টান্ত। দেখা যাচ্ছে দৃষ্টান্ত বা কোন ঘটনা ছাড়া প্রবাদ সৃষ্টি হয়নি। প্রতিটি প্রবাদের পিছনে আছে কোন না কোন ঘটনা বা বাস্তব অভিজ্ঞতা। গত ২৬-২৮ জুন ২০০৭ তারিখে আমি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত লোকসংস্কৃতি সম্মেলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করি। সম্মেলনের এক পর্যায়ে সোসাইটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম স্যার আমাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি প্রবাদ ‘লগ্গু বুঝে না কুনুদিন করফুলের মূল্য’ এর লগ্গু শব্দের অর্থ জানতে চান। আমি শব্দটির অর্থ বলতে পারি নি। স্যার আমাকে বললেন শব্দটির অর্থ জেনে আমাকে জানাবে। আমি প্রায় দুই বৎসর ধরে শব্দটির অর্থ খুঁজেছি। কেউ আমাকে এর অর্থ বলতে পারলেন না। যারা প্রবাদটি জানে তারাও কেউ এর অর্থ বলতে পারল না। পরে অন্য একটি প্রবাদ ‘ইতরের সাথে পিতর হইয়ো না-সভাতে যাইব জাইত/লগ্গুর সাথে পিরিত করলে পাখ কাটবো রাইত।’ প্রবাদটি সংগ্রহ করি। এই প্রবাদের একটি কাহিনি আছে। একটি বিড়াল একটি ইঁদুরকে ধরার জন্য ধাওয়া করল। ইঁদুরটি বাঁচার জন্য গাছে উঠে গেল। বিড়ালটিও ছিলো গেছো বিড়াল। ইঁদুরকে ধরার জন্য সেও গাছে উঠল। ইঁদুর বাঁচার জন্য শীর্ষ ডালে উঠে গেল। শীর্ষ ডালে ছিলো একটি ঈগল পাখির বাসা। ইঁদুর ঈগলের বাসায় উঠে গেল। ঈগলের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ইঁদুর। কিন্তু ঈগলটি তখন ডিমে তা দিচ্ছিল। ডিমে তা দিলে কোন পাখি শিকার করে না এবং কোন খাবারও গ্রহণ করে না। তাছাড়া ইঁদুরটি বিপদে পড়ে এসেছে। তাই ঈগল তাকে না তাড়িয়ে বাসায় আশ্রয় দিল। সকালে ঈগল পাখি উড়তে যেয়ে দেখে রাতে ইঁদুর তার সব পালক কেটে ফেলেছে। সে উড়তে পারছে না। তাই এই প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে- ‘ইতরের সাথে পিতর হইয়ো না-সভাতে যাইব জাইত/লগ্গুর সাথে পিরিত করলে পাখ কাটবো রাইত । এখানে লগ্গু হচ্ছে ইঁদুর। কিন্তু ‘লগ্গু বুঝে না কুনুদিন করফুলের মূল্য’ এই প্রবাদের অপর একটি শব্দ ‘করফুল’ এর অর্থও আমি খুঁজে পাচ্ছি না। শেষ পর্যন্ত মাঞ্জু ভূঁইয়ার গাওয়া একটি ঘুসা গান থেকে শব্দটির অর্থ পেলাম। গানটি হচ্ছে-

    বিটিশ আর জাপানে লাগিল সমর
    পরথমে বানাইল ঘাটি নামে সিঙ্গাপুর
    তারপরে বানাইল ঘাটি পতেঙ্গার মাঠে
    তিনশ ষাইটখান ঘাটি হইল এশিয়া মাজারে
    অবশেষে ঘাটি হইল সিঙ্গারবিলের মাঠে
    আশে-পাশের গ্রাম যত উঠাইয়া দিল
    ভাই রে করফুলের গাছ যত বিনাশ করিল
    জঙ্গল কাটিয়া ভাই রে মঙ্গল করিল
    তার মধ্যে পাকা রোড তৈয়ার করিল
    আত্কা একদিন কী হইল আচম্বিত কারবার হইল
    জাপানি জাহাজ আইল
    এংরাজ সৈন্য যত ছিল তিন কোণাইচ্চা গাতাত গেল
    বোমা বোমা পুটকি ছিল
    নয়টা বোমা ছাইড়া দিল
    রমেশ বাবুর বাড়ি ছিল
    সেইখানটাতে একটা ছিটল
    বুড়া একটা বেডি ছিল
    বেচকি দিয়া মইরা রইল
    দেশের মানুষ দেখতে পাইল…

    আদিকাল থেকে সিঙ্গারবিলের জঙ্গলে অনেক ঔষধি গাছ পাওয়া যেত। সারাদেশ থেকে বৈদ্য কবিরাজগণ সিঙ্গারবিলের এই জঙ্গল থেকে ঔষধি গাছ সংগ্রহ করতো। শেখ নূরালী নামক এক বৈদ্য তাদের পারিবারিক কুষ্ঠিনামায় লিখেছেন- ১৩৩৭-৩৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি তাদের হরিঞালা বস্তি হইতে পানির মওসুমে পানসি লিঞা তিতাস নদীর পূর্বতটের পাহাড়ি তাল্লুকে গেলাই দাওয়াই বৃক্ষের লাইগে। যাইয়া দেখেন যবনের এক পুরাতন বস্তি।’ এর থেকেও জানা যায় প্রাচীনকাল থেকেই অত্র অঞ্চল ঔষধি গাছের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে বৈদ্য কবিরাজগণ করফুল নামক ঔষধি গাছ সংগ্রহ করতেন। কিন্তু করফুল ইঁদুরে কেটে ব্যাপক ভাবে নষ্ট করতো। বহু দূর থেকে যার জন্য তারা আসতেন, ইঁদুর তার মর্যাদা বুঝে না। তাই তারা প্রবাদটি তৈরী করে -‘লগ্গু বুঝে না কুনুদিন করফুলের মূল্য’। তাহলে দেখা যাচ্ছে এই প্রবাদটির একটি ইতিহাস আছে। বৈদ্য কবিরাজদের তৈরী এই প্রবাদ।

    আরেকটা নজির ‘আখল দস্তুরে মুখ লড়ে, ঝুলাবাইয়া ফেন পড়ে।’ এর পেছনের কাহিনিটা হচ্ছে- এক ভিক্ষক সারাদিন ভিক্ষা করে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত ক্ষুধার্ত। সে এক বাড়িতে পৌঁছে দেখতে পেল গৃহকত্রী রান্না করছে। সে কিছু চাল দিয়ে তাকে দুটো ভাত রান্না করে দিতে অনুরোধ করল। কিন্তু গৃহকত্রী অপারগতা প্রকাশ করল। ক্ষুধার্ত ভিক্ষুক অনুনয় বিনয় করে বলল, সে সকাল থেকে কিছু খায়নি। অগত্যা গৃহকত্রী তার দেয়া চালগুলো পাশের চুলায় বসিয়ে দিল। ভিক্ষুক চলে গেল গ্রামের পাশে নদীতে গোছল করতে। সেখানে কথা প্রসঙ্গে এক লোককে বলল- ‘চাইল থাকলে কত চুতমারানিই রাইনদা দে’। ভিক্ষুক গোছল সেরে এসে গৃহকত্রীর বাড়িতে দাঁড়াল। দূর থেকে সে দেখতে পেল যাকে সে বলেছিল- ‘চাইল থাকলে কত চুতমারানিই রাইনদা দে’ সেই লোকই গৃহকত্রীর স্বামী। এখন যদি সে তাকে দেখতে পায়, নিশ্চিত অপদস্ত হতে হবে। তাই সে গোপনে চলে যাওয়ার জন্য সে নারীকে বলল, মা গো আমার ভাতগুলো দিয়ে দেন। গৃহকত্রী তাকে জানাল তার ভাত হয়নি। সে বলল হওয়ার দরকার নেই, এটাই আমার ঝুলাতে দিয়ে দেন। তার পিড়া পিড়িতে গৃহকত্রী তাই করল। সে ঝুলা নিয়ে বাড়ির পিছনের রাস্তা দিয়ে পালাল। তখন তার ঝুলা বেয়ে পড়ছিল ফেন। সেই থেকে নজির তৈরী হল- ‘আখল দস্তুরে মুখ লড়ে, ঝুলাবাইয়া ফেন পড়ে।’

    ব্রাহ্মণবাড়িয়া মূলত কৃষি ভিত্তিক এলাকা। আদি মেঘনা ও তিতাস অববাহিকার ভাটি অঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ায় এখানকার মানুষের জীবনাভিজ্ঞতা বৈচিত্র্যময়। সেই কৃষি ভিত্তিক পরিবেশের প্রভাব এখানকার লোকসাহিত্যেও বেশ স্পষ্ট। যেমন- ‘নিয়াবুইদ্ধা সুয়া,হেওরা গাছের গুয়া।’ এই প্রবাদের অর্থ হচ্ছে- সন্তানহীনা (বাঞ্জা) স্ত্রীলোক হেওরা গুটার মতো মূল্যহীন। কারণ- ‘সাতপুত তের নাতি তইলে কর বোরো ক্ষেতি।’ কিংবা ‘যার আছে নাতিপুতি সে করুক বোরো ক্ষেতি।’ এমন অনেক প্রবাদও এখানে পাওয়া যায়। কৃষি কাজের জন্য অনেক লোকের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ করে আপন লোকজন না হলে কৃষিকাজে সফল হওয়া যায় না। তাই সন্তানহীনা (বাঞ্জা) স্ত্রীলোকের মূল্য এখানে বেশি নেই।

    গাঙ বিষয়ে প্রচলিত প্রবাদ
    ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাধারণ মানুষ নদীকে গাঙ বলে। গাঙ শব্দটি এসেছে গঙ্গা শব্দ থেকে। গাঙ নিয়ে এখানে অনেক প্রবাদের প্রচলন দেখা যায়।
    * গাঙের মরা কুডাদা টাইন্যা আনে।
    * গাঙ না থাকলেও গাঙের রেখ থাকে।
    * গাঙ পার অইয়া সারলে মাইজ্জা চেডের বাল।
    * হুনতে হুনা যা গাঙ ভরা পানি-যাইয়া দেখি ভিজে না তেনার কানি।
    * গাঙ দেখলে মুতে ধরে- লাঙ দেখলে হাসি উড়ে।
    * ভালা গাঙের পানি- ভালা কাপড়ের কানি।
    * থাকে যদি বন্দের মন- গাঙ পার অইতে কতক্ষণ।
    * গাঙের পানি ঘোলাও ভাল-জাতের মেয়ে কালাও ভাল।
    * গাঙের ঢেউ গাঙেই মজে।
    * যে গাঙে পানি নাই হেই গাঙ গাঙ না।
    * গাঙের পাড়ের বাড়ি,
    হিন্দু লোকের দাঁড়ি,
    বাজারের নারী- এই তিনে বিশ্বাস নাই।
    * বিনা বাতাসে কোনোদিন গাঙ লড়ে না।
    * গাঙে গাঙে দেখা অ- বইনে বইনে দেখা অ না।
    * আম পঁচা দুধে ভাসে- কাঁঠাল পঁচা গাঙে ভাসে।
    এই গাঙ নিয়ে প্রচলিত প্রবাদগুলোতেও ব্রাহ্মবাড়িয়ার নিজস্ব পরিবেশ ও ভাষা বৈশিষ্ট্যের ধারণা পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বামীকে ‘হাই’ বলে। ‘হাই’ নিয়ে অনেক নজির আছে। যেমন-
    * হাইয়ের নামে লেশ নাই, দেওর চৈদ্দ জন।
    * হাইয়ের আছে বার ভাই, হাই না থাকলে কেউই নাই।
    * হাইয়ের কান্দুন অ কান্দে, শুটকির ছানুন অ রান্দে।
    * হাই মইরা ভালা অইছে, দুই সতীনে মিল অইছে।
    * মায়ে করে ঝি ঝি, ঝিয়ে করে হাই হাই।
    * হাই মরলে হাই পাওয়া যা
    ভাই মরলে ভাই পাওয়া যা
    মা মরলে মা পাওয়া যা না।
    * হাই মরছে আঘুনে-কুয়ান দিছে ফাগুনে।
    বিবিধ প্রসঙ্গে প্রবাদ-প্রবচন
    বিচিত্র সব বিষয় অবলম্বনে প্রবাদ-প্রবচন প্রচলিত হয়েছে। মানব চরিত্রের নানা দিক যেমন এসব প্রবাদে খুঁজে পাওয়া যায়, তেমনি নানা আচার, প্রথা ও বিশ্বাস অবলম্বনে প্রবাদ প্রবর্তিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পল্লীর জনপদগুলোতেও এসব বৈচিত্রপূর্ণ প্রবাদ-প্রবচন খুঁজে পাওয়া গেছে। যেমন-
    * অধঃ বিবি পদঅ উঠছে,
    ফালদা বিবি কারঅ উঠছে।
    * রাজার পুতের হাতির মাইরা শরমে করে না রাও,
    কাতির পুতে মাছি মাইরা ভূমিতে না দেয় পাও।
    * পুতের উঠে দাঁড়ি ঘুরে বাড়ি বাড়ি,
    ঝিয়ের উঠে স্তন না পাওয়া যায় মন।
    * এক কাডে ধারে, আরেক কাডে ভারে।
    * এক গাছের বাহল, অন্য গাছে লাগে না।
    * উবের নাও পূবে দা বাও।
    * কাইট্টা দিলে যে ঝাল, বাইটা দিলে একই ঝাল।
    * কুত্তার কামড় হাটুর ভাডি।
    * কোন বা আগুনের আগুন, আবার কাডলের আলি পুড়া।
    * কার বেলে মরণকাল, কার বেলে হাঙ্গার পাল।
    এসব প্রবাদে বিষয় বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়। নানা প্রেক্ষাপটে নানারকম লোকজ্ঞানের অবতারণা হয়েছে। সবকিছুর মধ্যেই আছে সুদীর্ঘকালের অভিজ্ঞতার প্রমাণ। মানুষ জীবনের প্রাত্যহিক চর্চা থেকে যে জ্ঞান লাভ করেছে তারই প্রতিফলন ঘটেছে এসব প্রবাদ-প্রবচনে।
    * মানি করে মানের চিন্তা, কানি করে কানির চোখের চিন্তা।
    * কলা গেছে গলার তল, চুকলা গেছে ওগারের তল।
    * খাইতে খাইতে পেট বাড়ে, কইতে কইতে মুখ বাড়ে।
    * খা পরাণ আলাথালা, না খা পরাণ থাহে ভালা।
    * গলের দই গলে চুক্কা ক না।
    * গায়ে বাছুর ল না, গোয়াইল্লার পেরেশানি।
    * ছয়লের ঘরের তুলি উদাম।
    * চামড়া সুন্দর কুমড়ার বাহল, না খা বাদশা ঘেরানে পাগল।
    * চোখে লাজ কফালে আলিক্ষী।
    * জমির ভাতে পেট না ভরলে, লাইলের ভাতে পেট ভরে না।
    * জাতে গোতে কুমারের ঝি, মাইট্যা বাসুনরে ক এইডা কী ?
    * মাছ দা খাইতাম না শাক দা খামু, বিলাইরে পাও দেখামু।
    * মাচ্ছারাঙি সাজতে সাজতে, ফেইচ্চা রাজা।
    * মাডির তলের কাছিম, তার কি পূব আর পছিম।
    * পুতে দিব জারি গাইয়া, আমি মরব সিন্নি হাইয়া,
    অইছে পুতে ডাহে না বাপ- অইব পুতের আশা।
    * পথে পাইলাম কামার দাও বানাইয়া দেও আমার।
    * রঙে রঙে বিয়া করে ভাওয়াইল্লার ঝি, পুটকি ফুলাইয়া মরে হদামান গোষ্ঠী।
    * তোলা দুধে পোলা বাঁচে না।
    * ছাতা মাথাল ধরে না, নাইল্লা পাতা আগা মানে না।
    * রাজারে পাইছিল ভূতে, মাগনা পুজা বয়াইছিল নূর মোহাম্মদের পুতে।
    * হাজার কাউয়া, এক বাউরাল।
    * বুড়া কালে, কুড়ার ডাক।
    * যেদিক দিয়া রস পড়ে, সেই দিক দিয়া নলা ধরে।
    * কাল কাল বর্ষাকাল, ছাগলে চাটে বাঘের গাল।
    * যে তালের হউর বাড়ি, এ তালের সেলামালি।
    * তেলে রান্ধে ঘিয়ে রান্ধে, মা কয় আমার ঝিয়ে রান্ধে।
    * কপালে নাই সুখ, বিধাতা বিমুখ।
    * থাহি সাইবের বাড়িত মরছে সাইবের মা
    লগে পাছে না কানলে বেজার অইত না ?
    * দরগা কই, ছাতি মারে কই।
    * কির্ফিনের ধন পিঁপড়ায় খায়।
    * যে জানে না টিফের বাও, হের লগে গিয়া টিফ টিফাও।
    * কম তাইছে বিলাই গাছে উঠে না।
    * কৈতরের পাও সুন্দর, ছিনালের রাও সুন্দর।
    * ঘরের চাইলে বাড়া ভাত, কিনা চাইলে খেসারত।
    * পুত নষ্ট আডে, ঝি নষ্ট ঘাডে।
    * গাঁ মোড়ল মার হাই তার লগে কথা নাই।
    * বুঝ নাই দেশে পলান সার।
    * কাক কালো কোকিল কালো কালো মাথার কেশ,
    এর থিক্যা বেশি কালো মনের হিংসা বিদ্বেষ।
    * এমনি ইন্দুর গাতাত যা না, লেজে বানছে কুলা।
    * পরের বাড়ির পিডা, খাইতে লাগে মিডা।
    * পরের লাগি খাদ করে, নিজে খাদে পইরা মরে।
    * পুতে দিব জারি গাইয়া- আমি মরব শিন্নি হাইয়া,
    অইছে পুতে ডাহে না বাপ- অইব পুতের আশা !
    * কোনোবা আগুনের আগুন আবার কাডলের আলি পুড়া।
    * আমি বেন কই কী আমার সারিন্দা বেন বাজে কী।
    * বোরে বোরে হালুক না।
    * বাঘের দোআই দিয়া হিয়ালে গরু হা।
    * বিনা লাভে কেউ তুলার পুজাও ব না।
    * বিনা বাতাসে কোনোদিন গাঙ লরে না।
    * বুঝলে না রে পাগল মন- বুঝবে একদিন,
    বালুচরে নাও ঠেকাইয়া- ঠেলবে রাইত দিন।
    * বুদ্ধি চলে আগে, ভাগ্য চলে পরে।
    * বাপ দাদার নাম নাই চান মোল্লা বিয়াই।
    * বিবির লাইগ্যা আউডা বেরা, বিবি ঘুরে পাড়া পাড়া।
    * বুয়াইতে খোলা নাই, উলাইতে পুরা নাই।
    * বটের মতো ছায়া নাই, মায়ের মতো মায়া নাই।
    * ভাইয়ের শত্রু ভাই, মাছের শত্রু ছাঁই।
    * ভালার লগে চললে খা বিরার পান,
    বুরার লগে চললে কাডে দুই কান।
    * মা জনে না কচুঁ রানত, ঝিয়ে আইছে পাক্কন কাটত।
    * মার চেয়ে যার দরদ বেশি সে হয় রাক্ষসী।
    * মায়ে করে ঝি ঝি, ঝিয়ে করে হাই হাই।]
    * মাডির তলে কাছিম, তার কী পুব আর পছিম।
    * মুখে মধু অন্তরে বিষ, তার নাম দারগা পুলিশ।
    * মুততে ছাগল ধরে না, পরে ছাগল দৌঁড়াইয়া লাগ পা না।
    * মানি করে মানের চিন্তা, কানি করে কানির চোখের চিন্তা।
    * উপর দা ফিটফাট তলেদা সদর ঘাট।
    * যদি থাকে সাত পুত, তাও লাগে ভাই পুত।
    * যার কাজ তারে সাজে, অন্যের হাতে লাঠি বাজে।
    * যার হাতে রান্ধা না খাইছি- সে যে কত রান্ধরী, যারে চোখে না দেখছি- সে যে কত সুন্দরী।
    * যদি থাকে সুমন- এক নৌকায় লয় নয় জন,
    যদি থাকে কুমন- না লয় একজন।
    * যার মরণ যেখানে- নাও বায়া যাও সেখানে।
    * যে পাখি ওড়ে বাসাতই ধরফর করে।
    * যে গোষ্ঠীর বাইগ নাই, নাতি মরে আগে।
    * যার সাত বছরে আহল হয় না, তার সাতাইশ বছরেও হয় না।
    * যে করে পরের আশ- তার ঘটে সর্বনাশ।
    * রাজার আছে রাণী, কানার আছে কানী।
    * আমার ক্ষেতের ধান কেরি পোকে হা,
    আমার শালা-সম্মন্ধি না হাইয়া যা।
    * রাজা কইছে চুদির ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই।
    * বাপের বাড়ির মাইজ্জাল, জামাইর বাড়ির আইচ্ছাল।
    * লাইগ্যা থাকলে মাইগ্যা হাওন লাগে না।
    * সরদার ছাড়া গাও, বৈঠা ছাড়া নাও।
    * সতী নারীর পতি যেন পর্বতের চূড়া, অসতীর পতি যেন ভাঙ্গা নৌকার গোড়া।
    * সেয়ানা ঘুঘুর ছাও, ফাদে দেয় না পাও।
    * সিয়ানে সিয়ানে কাডল খা, বরবরার মুখে আডা লাগা।
    * সাব দেখছিলাম না বাফের গোতে, সাব দেখাইছে পাডার মার পুতে।
    * সৈয়দে সৈয়দে ঝগড়া করে, সুদ খুড়ে আইসা বিচার করে।
    * সময় থাকতে দইরা খাও, বেইল থাকতে আইট্টা যাও।
    * সিন্নি দেখলে আগগা, কুত্তা দেখলে পিচ্ছা।
    * এঙ্গা নাচে ব্যাঙ্গা নাচে, খৈয়াপুডি লইয়া নাচে।
    * সঙ্গীর লগে সঙ প্রতি কথায় রঙ, অসঙ্গীর লগে সঙ- গলায় ঢং ঢং।
    * সত্যের নাও সাতবার ডুবে, সাত বার ভাসে।
    * সারা দিন খাইট্যা পাইলাম দুই পিডা
    দুয়ারে চুফি দা পাইলাম চৈদ্দ পিডা।
    * শিকারের সময় কুত্তার আগা।
    * শুনতে শুনা যা সোনার গাও, যাইয়া দেখ মাডির গাও।
    * হাত্থিরঅ বিগড়ে পাও, সুজনেরঅ ডুবে নাও।
    * হাতে নাই টাকা কড়ি, পাগড়ি বাধে তেরা।
    * হাদলে জামাই কোশ খায় না, খুইজ্জা জামাই কেতা পায় না।

    লেখকঃ কবি মহিবুর রহিম

    প্রভাষক,চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া,

    সম্পাদনা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী

    এম.আমজাদ চৌধুরী রুনু

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম