• শিরোনাম

    বাইতুল্লাহ দেখি প্রেমের চোখে

    | সোমবার, ০৮ আগস্ট ২০১৬

    বাইতুল্লাহ দেখি প্রেমের চোখে

    বায়তুল্লাহ শরিফের দিকে প্রথম দৃষ্টি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহপাকের মাহাত্ম্য হৃদয়ে ধারণ করার চেষ্টা করা উচিত। আশা করা উচিত তিনি যেমন দয়া করে তার পবিত্র ঘর দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন তেমনি তার পবিত্র সত্তার দিদারদানে ধন্য করবেন। তাই হাজারো শোকর জ্ঞাপন করার সময় সেটি হবে। কাবাঘরের তাওয়াফকে নামাজের মধ্যে গণ্য করতে হবে। তাওয়াফের সময় হৃদয়ে তাজিম, ভয়, আশা ও ভালোবাসা পোষণ করতে হবে। বায়তুল মামুর আকাশে কাবার বিপরীত প্রান্তে অবস্থিত। ফেরেশতারা তার তাওয়াফ করেন। কাবার তাওয়াফ ফেরেশতাদের মতোই হয়ে যায়। তবে তা শুধু দেহের তাওয়াফ করা নয়, অন্তরের স্মরণের তাওয়াফ সৃষ্টিকর্তার চারপাশে। এ চিত্রটি খুবই কম দেখতে পাওয়া যায়। অনেককেই তাওয়াফের সময় বাক্যালাপে রত থাকতে দেখা যায় সঙ্গীর সঙ্গে। মোবাইলে গল্পগুজব এবং সেলফি তুলতে দেখা যায়। এটা খুবই লজ্জার বিষয়। এতে নিজের এবং অন্যের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা শানুহুর রাজকীয় দরবার এটি। এ মহান দরবারের শান রক্ষা করা একান্তই দরকার। প্রকৃত প্রেমিকরা সওয়াব লাভের বদলে তার প্রেম লাভের প্রত্যাশায় মত্ত থাকেন।

    পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরিফে নেক কাজের সওয়াব প্রচুর, গোনাহের ব্যাপারে ঠিক সেই হিসাব। ১৭ পারার ১০ রুকুতে আল্লাহপাক জানান : যে ব্যক্তি হেরম শরিফের মধ্যে আল্লাহদ্রোহিতা ও শরিয়তবিরোধী কার্যকলাপ করবে, আমি তাকে ভীষণ আজাব ভোগে বাধ্য করব। হজরত শেখ সাদী (র.) বলেন, রাজদরবারের দানসামগ্রী প্রচুর বটে, কিন্তু গলাকাটা যাওয়ার আশংকাও সমধিক। বায়তুল্লাহ শরিফ স্পর্শ করার সময় মনে করতে হবে গৃহের প্রভুর মহব্বত ও নৈকট্য অন্বেষণ করছি। পাপকর্ম মাফ চাওয়া এবং ভবিষ্যতে না করার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।

    সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সায়ী অর্থাৎ আসা-যাওয়া করার সময় মনে করতে হবে- কেয়ামতের ময়দানে মিজানের উভয় পাল্লার মাঝখানে এমনিভাবে ঘোরাফেরা করতে হবে। ওই পাল্লাদ্বয়ের মাঝখানে এমনিভাবে আসা-যাওয়া করতে হবে এটা দেখার জন্য যে কোন পাল্লাটি ভারী হয় এবং কোনটি হালকা।

    আরাফাতে অবস্থান করার সময় মানুষের ভিড়, আওয়াজ, ভাষার ভিন্নতা এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের হাজীরা নিজেদের দলনেতার সঙ্গে চলার দৃশ্য দেখে কেয়ামতের কথা স্মরণ করা উচিত। ওই দিন সব উম্মত নিজ নিজ পয়গম্বরকে অনুসরণ করবে সাফায়াত লাভের উদ্দেশ্যে। তাই আরাফাতে অত্যন্ত কাকুতি-মিনতিসহ আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা দরকার। যাতে কামিয়াব ও রহমতপ্রাপ্ত দলের সঙ্গে হাসর হয়। এ স্থানে নিজের আশা কবুলই মনে করতে হবে। সৎ কর্ম পরায়ণরা এখানে অবশ্যই বিদ্যমান থাকেন। আরাফার জাবালে রহমতে হজরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.)-এর গুনাহ মাফ হওয়ার পর তারা মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করেছিলেন। তাই মুজদালিফায় অবস্থানের সময় এবাদাত-বন্দেগি করায় ব্যস্ত সময় পার করতে হবে আল্লাহ পাকের রহমত পাওয়ার আশায়।

    কংকর নিক্ষেপের সময় ভাবতে হবে বান্দার বন্দেগি প্রকাশ করার জন্য তার আদেশ পালন করছি। বাহ্যিকভাবে শয়তানের উদ্দেশে ঢিল ছুড়ছি। আর আত্মিকভাবে ভাবতে হবে নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা নফসে আম্মারা যা আমাদের কুপথে নিয়ে যায় তাকে ধ্বংস করছি।

    রাসূল (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি হজ সম্পন্ন করল এবং আমার ওফাতের পর আমার কবর জিয়ারত করল, সে যেন জীবদ্দশায়ই আমার জিয়ারত করল [মিশকাত]। মদিনা যেতে পথিমধ্যে বেশি বেশি দরূদ, সালাম ও এস্তেগফার পড়া জারি রাখতে হবে। মদিনা পৌঁছার পর ভাবতে হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসূল (সা.) এবং সর্বোত্তম মুসলমানদের জন্য এ স্থানকেই নির্ধারণ করেছিলেন। আল্লাহর ফরজগুলো প্রথমে এখানেই পালন করা হয়েছে। এ স্থানেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিবর্গের স্মৃতিতে পূর্ণ। সবার প্রতি গভীর আবেগে সালাম প্রদান করা জরুরি। সর্বোপরি খুবই আদবের সঙ্গে রওজা পাক সালাম ও দরূদ পাঠ এবং ১৪০০ বছর আগের দৃশ্যপট কল্পনায় এনেও শান্তি লাভ করা যায়। আল্লাহ পাক তার হজ কবুল

    করেন যাকে প্রিয় মনে করেন। তার মহব্বতের চিহ্ন যেন আমাদের মাঝে প্রকাশ পায় এই কামনাই রইল।

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম