• শিরোনাম

    ঈদের ছবির হালহকিকত

    | বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

    ঈদের ছবির হালহকিকত

    গেল রোজার ঈদের ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যকে পুঁজি করে কোরবানির ঈদেও মাঠে নেমেছিলেন প্রযোজকরা। কিন্তু হিসাবের খাতায় তাদের কিছুটা ভুল ছিল। শুধরে নেয়ার যথেষ্ট সময় থাকলেও সেটার ধারে কাছেও যাননি। নির্মাণের দিক থেকে রোজার ঈদের ছবি আর কোরবানি ঈদের ছবির মধ্যে বিস্তর ফারাক। স্পষ্টই চোখে পড়ার মতো। তবুও জীর্ণশীর্ণ ছবি নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন নির্মাতা-প্রযোজকরা। সফলতা কতটুকু পেয়েছেন তা নিয়েই এ প্রতিবেদন। লিখেছেন- এফ আই দীপু

    ঈদের রেশ এখনও কাটেনি। পশু কোরবানির আবহ ছড়িয়ে আছে চারদিকে। এমনিতেই বিনোদন আঙিনায় ঈদের আনন্দ যেন একটু দেরিতেই ফুরায়। সিনেমা পাড়ায় তার ছোঁয়াটা একটু বেশি। ঈদের ছবিগুলো চলে সপ্তাহ কিংবা পক্ষকালজুড়ে। গেল রোজার ঈদের বিগ বাজেট এবং নির্মাণশৈলীর দিক থেকে আগের চেয়ে এগিয়ে থাকার কারণে হলমুখী দর্শকদের সিনেমা দেখার আগ্রহকে পুঁজি করে এবারের ঈদেও মুক্তি পেয়েছে তিনটি ছবি। রাজু চৌধুরী পরিচালিত ‘শুটার’, শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত ‘বসগিরি’ ও ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত ‘রক্ত’। দৌড় প্রগিযোগিতায় তিনটি ছবির অবস্থান কী, কিংবা তার মধ্যে কোন ছবিটি শেষ হাসি হাসবে তা বুঝতে কিংবা বোঝাতে বিশেষ গবেষণার প্রয়োজন নেই। মর্নিং শো’জ দ্য ডে। সপ্তাহ শেষে কোন ছবির প্রযোজক পুঁজি ফেরত পেয়েছেন কিংবা ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন সেটা স্পষ্ট। দিন শেষে এখন বোদ্ধাদের স্তুতিই তাদের সান্ত্বনা।

    এবারের ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত তিনটি ছবির মধ্যে ব্যবসায়িক সাফল্যে এগিয়ে রয়েছে শাকিব খান অভিনীত দুটি ছবি। ‘বসগিরি’ ও ‘শুটার’ নামের এ দুটি ছবিতেই তার নায়িকা নবাগত বুবলী। শাকিব খানের কল্যাণে রাতারাতি নায়িকা বনে যাওয়া এ বুবলি ছিলেন সংবাদ পাঠিকা। গুঞ্জন রয়েছে, ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনিই একমাত্র নায়িকা যিনি বিয়ে এবং ডিভোর্স পরবর্তী সময় নায়িকা খ্যাতি পেয়েছেন।

    রাজু চৌধুরী পরিচালিত ‘শুটার’ মুক্তির আগেই হলগুলো থেকে অগ্রিমবাবদ মোটা অংকের টাকা তুলে এনেছে। সর্বাধিক সিনেমা হল পেয়েছে এ ছবিটি। অবশ্য এর জন্য একটি বিশেষ সিন্ডিকেট কাজ করেছে। অনেক তারকা ও নতুন শিল্পীর সমাবেশ দেখা গেছে এ ছবিতে। ছবিটি খুব কম বাজেটে তৈরি হয়েছে বলেও চাউর আছে। অথচ হল মালিকদের কাছ থেকে প্রিন্ট বাবদ মোটা টাকা আদায় করা হয়েছে। ফলে রিলিজের আগেই টাকা ঘরে তুলে এনেছে বলে বুকিং এজেন্টরা মন্তব্য করেছেন। যদিও মুক্তির পর প্রতিযোগিতায় ছবিটি পিছিয়ে পড়েছে। অভিযোগ আছে, এ ছবিতে শাকিবকে তার চরিত্রে নাকি খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুটিংয়ে সময় কম দেয়ার কারণেই নাকি এমনটি ঘটেছে বলে প্রযোজনা সূত্রে জানা গেছে। তা ছাড়া নির্মাণশৈলীর দিক থেকেও ছবিটির অনেক বেশি দুর্বলতা চোখে পড়েছে।

    অন্যদিকে মুক্তির আগেই আলোচনায় ছিল ‘বসগিরি’। সেই ধারাবাহিকতা মুক্তির পরও ধরে রেখেছে। বিদেশি লোকেশন, বিদেশি মিউজিশিয়ান এবং বিদেশি কোরিওগ্রাফার থাকার পরও ছবির নির্মাণ দুর্বলতা চোখে পড়েছে। মনে হয়েছে অনেক সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও পরিচালক সেটা কাজে লাগাতে পারেননি নিজের অদক্ষতা কিংবা না জানার কারণে। তারপরও এ ছবিটি দেখতে দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করছেন। ছবির নায়িকা নতুন এবং পরিচালক অপেক্ষাকৃত নতুন বলে নতুন প্রজন্মের দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে এ ছবির প্রতি। যদিও ছবির পুরো বিনিয়োগ তুলে আনা কঠিন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।

    ঈদের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছবি ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত ‘রক্ত’। এর দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, ছবির নায়িকা পরিমনির আগে মুক্তিপ্রাপ্ত কোনো ছবিই ব্যবসা সফলতা পায়নি। যে কারণে তার প্রতি দর্শকদের আস্থা কম ছিল। পাশাপাশি তার বিপরীতে ছিল রোশান নামে একেবারে আনকোরা নতুন নায়ক। যার কোনো প্রচার-প্রচারণাও ছিল না। দর্শকরা ছবি দেখার আগ পর্যন্ত নায়কের নামও শোনেননি অনেক ক্ষেত্রে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, অতিরিক্ত বাজেটের কারণে আগেভাগেই শঙ্কায় ছিলেন প্রযোজক। ঈদের আগে শাকিব খানের দুই ছবি হলগুলো থেকে অগ্রিম টাকা তুলতে থাকায় ‘রক্ত’ টেবিল কালেকশনের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। পাশাপাশি এ ছবিটির গল্পও ছিল নকল। যদিও অন্য ছবিগুলোও নকল জোড়াতালি গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে। হলিউডের একটি থ্রিলার ছবির অনুকরণে ‘রক্ত’ নির্মিত হয়েছে। তাই ঈদের ছবির ব্যবসায়িক সফলতায় রক্তের অবস্থান একেবারে শেষে সেটা অনুমেয়।

    চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত ঈদুল ফিতরের ছবিগুলোর ধারে কাছেও যেতে পারেনি এবারের ঈদের ছবি। ব্যবসায়িক সফলতা তো দূরের কথা, নির্মাণের দিক থেকেও যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। যার ফলে আবারও ঢাকাই ছবির প্রতি দর্শকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। যদিও এটা নিয়ে খুব বেশি আক্ষেপও দেখা যায়নি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। স্বল্প বাজেটে নির্মিত এসব ছবির ক্ষুদ্র সফলতাকে তারা অনেক বড় করে দেখছেন। এর ফলে যে তৈরি দর্শক হারাচ্ছেন তাতে তাদের মাথাব্যথা নেই। ব্যর্থতা সত্ত্বেও নিজেদের ছবির সফলতার জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও প্রচার আর বাস্তবতার মধ্যে দেখা যাচ্ছে অনেক ফারাক।

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম