• শিরোনাম

    বলা সহজ, করা কঠিন

    শামীমুল হকঃ | বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০১৭

    বলা সহজ, করা কঠিন

    দেশের পরিস্থিতিকে কোন নামে ডাকলে পারফেক্ট হবে? সাধারণ মানুষ অবশ্য বলছে দেশ আর দেশ নেই। কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ বোমার শব্দ, ফুটছে ককটেল, বর্ষণ হচ্ছে গুলি, আরও কত কি? ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের দৃশ্য দেখতে দেখতে টায়ার্ড জনতা। কথায় কথায় খুন, ধর্ষণ।

    মেয়ের ইজ্জতহানীর বিচার না পেয়ে পিতা-কন্যার আত্মহত্যাও বিবেককে জাগ্রত করতে পারেনি। রাজধানীর আলিশান কিছু হোটেল আছে যারা ধর্ষকদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে বসে আছে। সেখানে আবার নারী কর্মীও আছে যারা ধর্ষণে সহায়তা করে। আবার ধর্ষণের পক্ষে একদল কলম নিয়ে বসে আছে। হায়রে দেশ। হায়রে মানুষ।

    কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, এদেশ যেন বসবাসের অযোগ্য। যাওয়ার জায়গা নেই, তাই থাকতে হয়। মানুষ ক্ষুব্ধ, আতঙ্কিত। ঘর থেকে বেরুলে সুস্থভাবে ফেরা যাবে কিনা এ নিয়ে রয়েছে সংশয়, সন্দেহ। তারপরও মানুষ আশা নিয়ে বসে আছেন, হয়তো একদিন এ পরিস্থিতির অবসান হবে।

    পুলিশ আচরণ করবে পুলিশের মতো। যে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নেয় পুলিশ সেই জনগণের কল্যাণে কাজ করবে তারা। তাদের গুলিতে আর জনগণ প্রাণ হারাবে না। রাজনীতিকদের ইচ্ছায় আর ব্যবহার হবে না পুলিশ। যাদের ভোটে সরকার গঠন করেছে সে ভোটারদের নিয়ে আর খেলবে না সরকার। ভোটারদের আর রাজনীতির বলি বানাবে না। ভোটাররা হবে পূজনীয়। আর যারা মাঠের বিরোধী দল তারাও তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করবেন। সরকারের ভুল ধরিয়ে দেবেন, শুধরানোর সুযোগ দেবেন। এতে কাজ না হলে হিংসাত্মক কোন কর্মকাণ্ডে নয়, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অহিংস আন্দোলন করবেন। একেবারেই সহজ এসব কাজ। কেন যে রাজনীতিকরা একে কঠিন করে তোলেন এটা তারাই জানেন।

    প্রশ্ন হলো- এমন সহজ কাজ কি গত ৪২ বছরে এ দেশে হয়েছে? না হয়নি। বারবার জনতার টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা হয়েছে। কি গণতান্ত্রিক জামানা, কি স্বৈরতান্ত্রিক জামানা- সব জামানাই যেন এক। মানুষ শৃঙ্খলমুক্ত হতে পারছে না। ভোটের অধিকার যাদের তারা নিষ্পেষিত ছিল, আছে, থাকবে। এটা হলফ করে বলা যায়। কারণ, কথায় বলে- যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ। আর তাই পরিস্থিতি আগের মতোই থেকে যায়। পরিবর্তন হয় না। মানুষের আশা হয় গুড়েবালি। পরিস্থিতি হয়ে ওঠে বিস্ফোরণোন্মুখ, ভয়াবহ। গভীর সঙ্কটে পতিত হয় দেশ। ধাবিত হয় গাঢ় অন্ধকারের দিকে।

    দাদা বলেন- আসলে বলা সহজ, করা কঠিন। মানুষ যে নামেই দেশের এ পরিস্থিতিকে অভিহিত করুক না কেন এ থেকে উত্তরণের উপায় একমাত্র রাজনীতিকদের হাতেই। কিন্তু তারা কি অনুধাবন করছেন? তারা কি জনগণের মনের কথা বুঝছেন? যে জনগণ তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি, সেই জনগণকে কেন তারা জিম্মি করে রাখছেন। জনগণের দোহাই দিয়ে সবাই যার যার স্বার্থ হাসিল করে যাচ্ছেন।

    আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সব দলই বলেন, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন। এই যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এত কিছু হয়ে গেল, সবই করা হয়েছে জনগণের দোহাই দিয়ে। সরকার কি জনগণের কাছে জিজ্ঞেস করেছেন, তারা কি চান? বলতে গেলে সুশীল সমাজ, বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সবাই তো চেয়েছিলেন আরও দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সরকার কি তা করেছে? তাহলে জনগণের দোহাই দিয়ে কেন জনগণকে অপমান করা হচ্ছে? এ অধিকার তাদের কে দিয়েছে? এর উত্তর নেই। এখন আবার নির্বাচনী সহায়ক সরকারের সুর নিয়ে খেলা জমে উঠছে। সামনে আরও কত কি যে হয় কে জানে। তবে পেছনে রহস্য হলো- সবার উদ্দেশ্য গদিতে যাওয়া। ধ্যান-ধারণাও তাই। আর এজন্যই ঘটছে এত কিছু। পেছনে কার কি হলো তা দেখার সুযোগ নেই তাদের।

    যেন ওই ডাক্তারের মতো। চেম্বারে বসে ডাক্তার কি যেন চিন্তা করছেন। এ সময় এসেছেন এক রোগী। ডাক্তার তার সমস্যা কি জানতে চাইলেন। রোগী তার কি কি সমস্যা একে একে বলে যাচ্ছেন। ডাক্তার মাথা নিচু করে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন। বললেন, নিয়মিত ওষুধ খাবেন। রোগী ফি দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। বাসার কাছাকাছি এক ফার্মেসিতে গিয়ে প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে রোগী বললেন, আমাকে ওষুধগুলো দেন। ফার্মেসি মালিক প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে তো অবাক। সেখানে লেখা ফিফটি ব্যাগ সিমেন্ট এবং টু টন রড। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ওই ডাক্তার বিলাসবহুল বাড়ি বানাচ্ছেন। এ নিয়ে তার ভীষণ চিন্তা। আজও চেম্বারে আসার সময় ঠিকাদার বলেছেন, যেন ৫০ ব্যাগ সিমেন্ট ও ২ টন লোহা পাঠিয়ে দেন। রোগী যখন তার কাছে রোগের বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখনও ডাক্তারের মাথায় কাজ করছিল ঠিকাদারের বলে দেয়া ৫০ ব্যাগ সিমেন্ট ও ২ টন লোহার কথা। তিনি তা-ই লিখে দিয়েছেন প্রেসক্রিপশনে। ডাক্তারের যেমন রোগীর দিকে মনযোগ নেই, মনযোগ বাড়ি বানানোর দিকে। তেমনি রাজনীতিকদের আমজনতার দিকে নজর নেই, নজর হলো ক্ষমতার গদির দিকে। তাইতো সবাই দেশটাকে নিয়ে খেলছেন।

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    সবটুকুই সত্য

    ১৮ জুন ২০১৭

    বঙ্গ জননী

    ১৩ আগস্ট ২০১৭

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম