• শিরোনাম

    অণুপ্রেরণায় উৎসাহ উদ্দীপনা আর অণুসরণ : বদলে যাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া — আল আমীন শাহীন

    আল আমীন শাহীনঃ | বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

    অণুপ্রেরণায় উৎসাহ উদ্দীপনা আর অণুসরণ :  বদলে যাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া — আল আমীন শাহীন

    দুদিনের ভারী বর্ষণ,মাঝে মধ্যে বিরতি। বৃষ্টি শব্দপ্রিয় বলে ছাদের ঘরে টিনের চাল দিয়েছি। ছোট বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি বৃষ্টি ধূয়ে দিচ্ছে চারপাশ। রাস্তা ঘাট, ঘরবাড়ি, গাছপালা। বৃষ্টি না হলে গাছের সবুজ পাতার রং বিবর্ণ হয়ে যেত। ভালই লাগছে, বর্ষণ দর্শনে। ঘরবন্ধি হলেই টিভির সামনে থাকা পুরনো অভ্যেস। টিভিতে দেখি ব্যতিক্রমী এক বিজ্ঞাপন, একটি বহুতল ভবনের নীচ তলায় লিফটের গোড়ায় লাইন করে দাঁড়িয়ে আছে উঠতি যুবক যুবতী সহ ১০/১৫ জন। একসময় এক বৃদ্ধ লাঠি ভর করে এসে সবার দিকে তাকালো। তাকিয়ে সবাইকে দেখে দেখে লোকটি লিফটে না গিয়ে সোজা চলে গেলেন সিঁড়ির দিকে। সিঁড়ি বেয়ে উঠা শুরু করলেন। সবাই অবাক বৃদ্ধ মানুষ তিনি লিফটে যাবার কথা না গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন দেখে। এরিমধ্যে দুই যুবক ঐ বৃদ্ধের অণুসরণ করলো,লিফটের অপেক্ষায় না থেকে সিড়ির দিকে এগিয়ে গেল। একে একে বেশ কয়েকজন। কমে গেল লিফটের অপেক্ষায় থাকা জনযট। ভালই লাগলো বিজ্ঞাপনটি। জনযট সৃষ্টি আর সময় ক্ষেপন না করে এগিয়ে যাওয়ার অণুপ্ররণা পাওয়া গেছে এই বিজ্ঞাপনে। আসলে অণুপ্রেরণা উদ্যোগ উৎসাহ মনকে পরিবর্তন করে দেয়। মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম ঐ বৃদ্ধকে। বর্ষণে বিরতি পেয়ে ঘর থেকে বের হলাম। মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে ভাল লাগছে। প্রান্তিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরটা আমার খুব প্রিয়। এক সময় দাঁড়ালাম শহরের প্রধান ব্রীজের কাছে। ব্রীজের নীচে শহর খালেতাকিয়ে দেখি স্বচ্ছ জলধারার প্রবাহ। উঁকি দিয়ে দেখি স্বচ্ছ জল আয়নার মতো আমাকে আমি দেখছি । অন্যরকম অনুভ’তি। এ খাল পাড়েই নানাবাড়ি পৈরতলায় আমার জন্ম। শৈশব কৈশোর আর যৌবনের নানা স্মৃতি। খালের পানিতে গোসল, দাপাদাপি,মামাদের হাতে জলে ভেসে সাঁতার শেখা, দূরন্তপনায় উচু ব্রীজ থেকে খালের পানিতে লাফ ঝাঁপ, খাল থেকে মাছ ধরা, ¯্রােতের বিপরীতে সাঁতরিয়ে সাঁতার, পৈরতলা থেকে ছোট নানার নৌকায় চড়ে সদর থানা ঘাটে আসা নানা স্মৃতি ভাসছে মনে। সেই দৃশ্যপট নেই অনেক বছর। বছরে বছরে খালটি মরা খালে পরিণত হয়ে গেছে। নানা আশ্বাস পরিকল্পনা অনেক কিছুই খালটিতে জলপ্রবাহ আনতে পারেনি। উল্টো তল দেশ ভরাট হয়ে এর বুকে পথের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিনপর জলপ্রবাহ দেখে অন্যরক সুখ পেয়েছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম বার একজন উদ্দীপক মানুষ। উনার নানা কাজেই উদ্দীপনা পাওয়া যায়। সম্মিলিত প্রয়াসে ভাল কিছু করার অণুপ্রেরণা দিয়েছেন তিনি নানা কাজেই। এই খালটিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে উজ্জীবিত করতে তিনি পরিকল্পনা করে উদ্যোগ নেন, এই উদ্যোগে অংশ নেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এগিয়ে আসেন সহযোগিতায়। খাল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। কার্যক্রমে ছিলেন জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম বার, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবীর,বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার সহ অন্যান্যরা। উদ্বোধনী পর্বে আহবান জানানো হয়, শহর খাল আমাদের সকলের সম্মিলিত ভাবেই এর ঐতিহ্য জলের গতিধারা রক্ষা করতে হবে। অবাক হলাম খাল পরিচ্ছন্নতার অভিযান দেখে দীর্ঘদিনের আবর্জনায় ভরা মরা খালে নেমেছে পৌর সভার পরিচ্ছন্নতার কর্মী বাহিনী, সাথে নেমেছে রাজনীতিবিদ, পুলিশ, বিভিন্ন সংগঠনের তরুণ যুব কিশোর সহ নানা বয়সীরা। অণুপ্রেরণা উৎসাহ দিতে মঞ্চে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্পী সংসদ বৈশাখী শিল্পী গোষ্টী পুলিশের শিল্পী দল সচেতনতার আহবান জানিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করছে। এক ব্যতিক্রম দৃশ্যপট, ব্যাপক উদ্দীপনা উৎসাহ সাড়া সবার মাঝে। সারা শহরে আলোচনার বিষয় হলো এ ঘটনা। অনেক মানুষ ছুটে আসছে মরা খালে স্বচ্ছ পানি দেখতে।
    আবারো বৃষ্টি তবে সয়ে যাওয়ার মতো, ভাবছি মনটা ভাল হয়ে গেছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভিজলে ভালই লাগবে। শহরের মেড্ডার দিকে যাচ্ছি। যাবার পথে দেখি মেড্ড্ াপাইকপাড়ার সংযোগ কালভার্টে বৃষ্টিতে ভিজে এক স্কুল শিক্ষক নেমেছে বড় ড্রেনে। আমার প্রিয় ভাজন মুকিত , হাতে লাঠি, ঘটনা কি ? মোটর সাইকেল থামিয়ে দেখি লাঠি নিয়ে ড্রেনের মাঝে আটকে থাকা আবর্জনার মাঝে সে খোাঁচা দিচ্ছে। লাঠির খোচায় এক সময় পলিথিন আর আবর্জনার স্ত’প সরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হলো ঐ ড্রেনে জলের ধারা। একজনের এক খোঁচায় এমন প্রবাহ। আমাকে দেখে উঠে এলো মুকিত। মুখে তার তৃপ্তির হাসি। মুকিত বল্ল, স্যার এই জায়গায়টায় একটু প্রতিবন্ধকতা হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, কয়েকটি পাড়ার মানুষ জলাবদ্ধতায় দূভোগ পোহায়। আজ এমনই হয়েছিল,অল্প খোঁচা দিতেই পানি নামতে শুরু করেছে। নিজের পাড়ার জন্য নিজেই কাজটা পারি যখন করে ফেলেছি, এখন নিজের মনেই কিছু করার অন্যরকম সুখ পাচ্ছি। জড়িয়ে ধরলাম মুকিতকে। বুকে বুক মিশিয়ে অন্তর থেকে মুকিতকে বল্লাম ধন্যবাদ মুকিত, একেই বলে অণুসরণ, অণুপ্রেরণা আর স্বতস্ফ’র্ত উদ্দীপনা আর নিজের স্বার্থে সবার স্বার্থে কিছু করার মনে ভিণœ্ রকম আনন্দ। ফিরে আসার সময় আশায় বুক ভরে গেল, মনে মনেই বল্লাম এমন মুকিতরাই বদলে দিবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
    লেখক : সিনিয়র সহ সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, সম্পাদক নতুন মাত্রা।

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    সবটুকুই সত্য

    ১৮ জুন ২০১৭

    বঙ্গ জননী

    ১৩ আগস্ট ২০১৭

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম