• শিরোনাম

    শিক্ষা ও সাধনার উত্তরাধিকার ——-মহিবুর রহিম

    | মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

    শিক্ষা ও সাধনার উত্তরাধিকার ——-মহিবুর রহিম

    আজ হতে প্রায় চব্বিশ শ বছর পূর্বে সভ্যতার এক উষালগ্নে গ্রিকদেশে জন্মগ্রহণ করেন তিন জন জ্ঞান তাপস মহামতি সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খৃ:পূ:), প্লেটো (৪২৭-৩৪৭ খৃ:পূ:) ও এরিস্টটল (৩৮৪-৩২২ খৃ:পূ:)। আধুনিক মানুষের চিন্তা চেতনা আর জ্ঞান সাধনার জগতে এই তিন জনই উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বরূপ। সক্রেটিসের মধ্যে যে চিন্তার উন্মেষ ঘটেছিল, প্লেটো ও এরিস্টটল তাকেই সুসংহত দর্শনে রূপ দিলেন। এরা শুধু যে গ্রিসের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, শিক্ষাবিদ তাই নয়, সমগ্র বিশ্বের জ্ঞান জগতে এরা প্রাণ পুরুষ। বিশেষত আধুনিক জ্ঞান- বিজ্ঞানের বিবেচনায় তারা ছিলেন প্রথম পর্বের মানবিক শিক্ষা ও দর্শনের প্রবক্তা। যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে আজকের বিশ্ব সভ্যতা।

    এই তিন মনীষীর অগ্রপথিক হলেন সক্রেটিস। তাঁর জীবন খুবই অভিজ্ঞতা বহুল। সে সময়ে গ্রিক অঞ্চলটি ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এগুলোকে বলা হত নগর রাষ্ট্র। ফলে এদের মধ্যে মারামারি, যুদ্ধ বিগ্রহ, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রায় লেগেই থাকত। সে কারণে দেশের প্রতিটি তরুণ, যুবক, সক্ষম পুরুষদের বাধ্যতামূলক যুদ্ধে যেতে হত। সক্রেটিসকেও এথেন্সের সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে এ্যামপিপোলিস অভিযানে যেতে হল। এ অভিযানের তিক্ত অভিজ্ঞতায় তাঁর মন যুদ্ধের প্রতি ক্রমশ বিরূপ হয়ে উঠল। তিনি সৈনিক বৃত্তি ত্যাগ করে এথেন্সে ফিরে এলেন। এথেন্স তখন জ্ঞান-গরিমা, শৌর্য-বীর্যে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশ। সেটা ছিল শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির ও স্বর্ণযুগ। এ পরিবেশে নিজেকে জ্ঞানের জগত হতে দূরে সরিয়ে রাখতে পারলেন না সক্রেটিস। তিনি ঠিক করলেন জ্ঞানের চর্চায়, বিশ্ব প্রকৃতিকে জানবার সাধনায় নিজেকে উৎসর্গ করবেন। দীর্ঘদিনের সাধনায় তিনি হয়ে উঠলেন গ্রিসের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ। কিন্তু এই সাধনার জীবন ছিল তাঁর কন্টকাকীর্ণ। সক্রেটিস সকল বৈরিতাকে জয় করলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষাই মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষের অন্তরের জ্যোতি উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। জ্ঞানের মধ্যে দিয়েই মানুষ একমাত্র সত্যকে চিনতে পারে। যখন তার কাছে সত্যের স্বরূপ উদ্ভাসিত হয়ে উঠে, সে আর কোন পাপ করে না। অজ্ঞতা থেকেই সকল পাপের জন্ম। সক্রেটিসের সাধনা ছিল মানুষের মনের সেই অজ্ঞতাকে দূর করে তার মধ্যে বিচার বুদ্ধি বোধকে জাগ্রত করা। যাতে তারা সঠিকভাবে নিজেদের কর্মকে নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রন করতে পারে। তাঁর লক্ষ্য ছিল আলোচনা, জিজ্ঞাসা ও প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে সেই সত্যকে উপলব্দি করতে মানুষকে সাহায্য করা। এই্ তর্ক বিচারের পদ্ধতিকে বলা হয় উরধষবপঃরপ গবঃযড়ফ. পরবর্তীকালে তার শিষ্য প্লেটো ও এরিস্টটল এই ধারাকে বিকশিত করেছিলেন ন্যায়শাস্ত্রে। সক্রেটিসের এই জ্ঞান ও সত্যানুসন্ধানকে কিছু মানুষ সুনজরে দেখেনি। তারা সক্রেটিসের বিষয়ে অপপ্রচার শুরু করল এবং জনগণের মধ্যে ভুল ধারনা ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করল। এদের মধ্যে কিছু অভিজাত শ্রেণীর মানুষ ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হল তিনি এথেন্সের প্রচলিত দেবতাদের অস্বীকার করে নতুন দেবতাদের প্রবর্তন করতে চাইছেন। দ্বিতীয় অভিযোগ হল তিনি দেশের যুব সমাজকে ভ্রান্ত পথে চালিত করেছেন। এই অভিযোগের বিচার করার জন্য আরোচনের সভাপতিত্বে ৫০১ জনের বিচারকমণ্ডলী গঠিত হল। এই বিচারকমণ্ডলীর সামনে সক্রেটিস এক দীর্ঘ জবানবন্দি দিয়েছিলেন। যা ইতিহাসে সক্রেটিসের জবানবন্দি নামে খ্যাত।

    সেই জবানবন্দিতে সক্রেটিস বলেন- ‘হে এথেন্সের অধিবাসীগণ, আমার অভিযোগকারীদের বক্তৃতা শুনে আপনাদের কেমন লেগেছে জানি না, তবে আমি তাদের বক্তৃতায় চমকে আত্মবিস্মৃত হয়েছিলাম। যদিও তাদের বক্তৃতায় সত্যভাষণের চিহ্নমাত্র নেই। আমি অভিযোগকারীদের মত মার্জিত ভাষার ব্যবহার জানি না। আমাকে শুধু ন্যায় বিচারের স্বার্থে সত্য প্রকাশ করতে দেওয়া হোক। কেন আমি আমার দেশবাসীর বিরাগভাজন হলাম? অনেক দিন আগে ডেলফির মন্দিরে দৈববাণী শুনলাম, তখনই আমার মনে হল এর অর্থ কি? আমি তো জ্ঞানী নই তবে দেবী কেন আমাকে দেবীর কাছে নিয়ে গিয়ে বলল এই দেখ গ্রিসের জ্ঞানী মানুষ।

    আমি জ্ঞানী মানুষ খুঁজতে আরম্ভ করলাম আর ঠিক একই জিনিস লক্ষ্য করলাম। সেখান থেকে গেলাম কবিদের কাছে। তাদের সাথে কথা বলে বুঝলাম তারা প্রকৃতই অজ্ঞ। তারা ঈশ্বর প্রদত্ত শক্তি ও প্রেরণা থেকেই সব কিছু সৃষ্টি করেন, জ্ঞান থেকে নয়। শেষ পর্যন্ত গেলাম শিল্পি, কারিগরদের কাছে। তারা এমন অনেক বিষয় জানেন যা আমি জানি না । কিন্তু তারাও কবিদের মত সব ব্যাপারেই নিজেদের চরম জ্ঞানী বলে মনে করত আর এই ভ্রান্তিই তাদের প্রকৃত জ্ঞানকে ঢেকে রেখেছিল।

    আমার এই অনুসন্ধানের জন্য আমার অনেক শত্র“ সৃষ্টি হল। লোকে আমার নামে অপবাদ দিল, আমিই নাকি একমাত্র জ্ঞানী। কিন্তু ততদিনে আমি দৈববাণীর অর্থ উপলব্দি করতে পেরেছি। মানুষের জ্ঞান কত অকিঞ্চিতকর। দেবতা আমার নামটা দৃষ্টান্ত স্বরূপ ব্যবহার করে বলতে চেয়েছিলেন তোমাদের মধ্যে সেই সর্বপেক্ষা জ্ঞানী যে সক্রেটিসের মত জানে। যে সত্য সত্যই জানে তার জ্ঞানের কোন মূল্য নেই। আমি নিশ্চয় জানি আমি অনেকের অপ্রিয়তা এবং শত্র“তা অর্জন করেছি এবং আমার চরম দণ্ড হলে ঐ শত্র“তার জন্যই হবে।

    হে এথেন্সের নাগরিকগণ, আমি বলি তোমরা হয় ইনতুসের কথা শোন অথবা অগ্রাহ্য কর। হয় আমাকে মুক্তি দাও নয়তো দিও না। কিন্তু নিশ্চিত থাকতে পার আমি আমার জীবনের ধারা বদলাব না। আমার ঈশ্বর এই রাষ্ট্র অক্রমণ করতে আমাকে পাঠিয়েছেন। রাষ্ট্র হল একটি মহৎ সুন্দর ঘোড়া। তার বৃহৎ আয়তনের জন্যে সে শ্লথগতি এবং তার গতি দ্রুততর করতে, তাকে জাগিয়ে তোলার জন্য মৌমাছির প্রয়োজন ছিল। আমি মনে করি যে, আমি ঈশ্বর প্রেরিত সেই মৌমাছি। আমি সর্বক্ষণ তোমাদের দেহে হুল ফুটিয়ে তোমাদের মধ্যে সুস্থ্য ভাবনা জাগিয়ে তুলি, যুক্তির দ্বারা উদ্বুদ্ধ করি এবং প্রত্যেককে তিরস্কারের দ্বারা তৎপর করে রাখি। বন্ধুগণ সম্ভব অসম্ভবের কথা বাদ দিয়ে বলছি মুক্তি লাভের জন্য বা দণ্ড এড়াবার জন্য বিচারকদের অনুনয় করা অসঙ্গত। এবার তোমাদের এবং আমার পক্ষে যা সর্বোত্তম সেই বিচার হোক।’

    এই জবানবন্দি প্রদানের পর এথেন্সের সেই জনাকীর্ণ আদালত বিচারে ২৮১-২২০ ভোটে সক্রেটিসকে দোষী সাব্যস্ত করে। সক্রেটিস আপোষ করলেন না বরং দণ্ডকেই মেনে নিলেন। সক্রেটিসের বন্ধুদের মধ্যে ক্রিটো ছিলেন সবচেয়ে ধনী। তিনি কারারক্ষীদের ঘুষ দিয়ে সক্রেটিসকে অন্যদেশে পালিয়ে যেতে পরামর্শ দিলেন। কিন্তু সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন দেশের প্রত্যেক নাগরিকেরই দেশের আইন শৃঙ্খলা মেনে চলা উচিত। বিচারালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার অর্থ আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। তাছাড়া এতে সকলের মনে এই ধারণা হবে যে, সক্রেটিস সত্যি সত্যি অপরাধী তাকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারকরা ঠিক কাজই করেছেন।

    সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরের দিন সকল শিষ্যরা একে একে এসে উপস্থিত হল কারাগারে। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সক্রেটিসকে হেমলক নামক বিষ পানের জন্য পাত্র দেয়া হল। তিনি হাসি মুখে সেই পাত্র তুলে নিলেন। অকম্পিত ভাবে শেষ বারের মত ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন এবং সমস্ত বিষ পান করলেন। ধীরে ধীরে বিষ সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। সক্রেটিসের পা দুটি ভারি হয়ে এলো। চলৎশক্তিহীন হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন তিনি। কাপড়ে মুখ ঢেকে দিলেন। কয়েক মুহুর্তে সব শান্ত। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সক্রেটিস যাত্রা করলেন অমৃতলোকে। তাঁর মৃত্যুর পরই এথেন্সের মানুষ ক্ষোভে দুঃখে ফেটে পড়ল। অনেকে অনুশোচনায় অত্মহত্যা করল। অভিযোগকারীদের মধ্যে মেনেতুসকে লোকেরা পিটিেিয় মেরে ফেলল। অন্যদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হল।

    সক্রেটিসই পৃথিবীর প্রথম দর্শনিক, চিন্তাবিদ যাকে তাঁর চিন্তা দর্শনের জন্য মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। এই মহান মনীষী মনে করতেন যতদিন লেখাপড়ার প্রতি মানুষের আকর্ষণ থাকে- ততদিন মানুষ জ্ঞানী থাকে, আর যখনই তার ধারণা জন্মে যে সে জ্ঞানী হয়ে গেছে-তখনই মুর্খতা তাকে ঘিরে ধরে।

    ২.
    সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো ছিলেন একজন বহুমাত্রিক প্রতিভা। তিনি সেই সীমিত সংখ্যক মানুষদের একজন যারা মানুষের প্রচলিত ধ্যান ধারণা বদলে দিয়েছিলেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল সম্ভ্রান্ত এক ধনী পরিবারে। অপরূপ ছিল তাঁর দেহ লাবণ্য। সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর, অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা আর জ্ঞানের প্রতি ছিল তাঁর উদগ্র আকাক্সক্ষা। সক্রেটিসের মত গুরুর শিষ্যত্ব লাভ করা, সব কিছুতেই তিনি ছিলেন সৌভাগ্যবান। প্লেটোর পিতা ছিলেন এথেন্সের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। কিন্তু আভিজাত্যের কৌলিন্য তাঁকে কোনদিন স্পর্শ করেনি। বাস্তব জীবনের জটিলতা আর সমস্যাগুলোর চেয়ে জ্ঞানের সীমাহীন জগত তাঁর মনকে বরাবরই আকৃষ্ট করত। এক সময় এথেন্স ছিল সর্ব বিষয়ে সমৃদ্ধ। প্লেটো যখন কিশোর সেই সময়ে সিসিলির সাথে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ে এথেন্স। এই যুদ্ধের পর থেকেই শুরু হল এথেন্সের বিপর্যয়। দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করে প্রতিষ্ঠিত হল স্বৈরাচারী শাসন। সমাজের সর্বক্ষেত্রে দেখা দিল অবক্ষয় আর দুর্নীতি। এ সময়ে প্লেটো বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে শিক্ষা লাভ করছেন। কারও কাছে শিখছেন তিনি সংগীত কারও কাছে শিল্প, কেউ শিখিয়েছেন সাহিত্য আবার কারও কাছে পাঠ নিয়েছেন বিজ্ঞানের। সক্রেটিসের প্রতি ছোটবেলা থেকেই ছিল প্লেটোর গভীর শ্রদ্ধা। সক্রেটিসের জ্ঞান, তাঁর শিক্ষা দানের পদ্ধতির প্রতি কিশোর বয়সেই আকর্ষণ অনুভব করেছিলেন। কুঁড়ি বছর বয়সে তিনি সক্রেটিসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তরুণ প্লেটো অল্প দিনের মধ্যেই হয়ে উঠলেন সক্রেটিসের সবচেয়ে প্রিয় শিষ্য। গুরুর বিপদের মুহূর্তেও প্লেটো ছিলেন তাঁর নিত্য সঙ্গী।

    তথাকথিত বিচারের নামে সক্রেটিসকে হত্যা করা হলেও তাঁর প্রজ্ঞার আলো জ্বলে উঠল প্লেটোর মধ্যে। প্লেটো যে শুধু সক্রেটিসের শিষ্য ছিলেন তাই নয়। তিনি ছিলেন গুরুর জ্ঞানের ধারক ও বাহক। গুরুর প্রতি এত গভীর শ্রদ্ধা খুব শিষ্যের মধ্যেই দেখা যায়। প্লেটো যা কিছু শিখেছেন , বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁর প্রধান নায়ক ছিলেন সক্রেটিস । এর ফলে উত্তরকালের মানুষদের কাছে একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সক্রেটিসকে কেন্দ্র করে প্লেটো তাঁর সব সংলাপ তত্ত্বকথা প্রকাশ করেছেন। সব সময়ই প্লেটো নিজেকে ্আড়ালে রেখেছেন । সক্রেটিসের জীবনের অন্তিম পর্যায়ের অসাধারণ বর্ণনা প্লেটো তাঁর ‘সক্রেটিসের জীবনের শেষ দিন’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।

    জ্ঞান সাধনার জগতে প্লেটোর অভিজ্ঞতাও ছিল ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত। সমকালীন চিন্তা নায়কদের সাথে তাঁর চিন্তার বিস্তার দূরত্ব ছিল। প্লেটো তাঁর জীবন অভিজ্ঞতার আলোকে লিখলেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘রিপাবলিক’। একটি আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা ফুটিয়ে তুললেন সেখানে। আসলে প্লেটোর আগে দর্শনশাস্ত্রের কোন শৃঙ্খলা ছিল না। তিনি তাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করলেন।

    প্লেটোর চিন্তা ভাবনা তাঁর যুগকে অতিক্রম করে হয়ে উঠেছে এক চিরকালীন সত্য। যার পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে তাঁর ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে। এটি চিরায়ত বিশ্বসাহিত্যের এক অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। যদিও এ গ্রন্থে মূলত রাষ্ট্রনীতির আলোচনা করা হয়েছে কিন্তু রাষ্ট্রনীতির প্রয়োজনে শিক্ষা,সাহিত্য, শিল্পকলা, শরীরচর্চা-এমনকি কাব্য অলঙ্কার ও নন্দন তত্ত্ব বিষয়েও এ গ্রন্থে আলোচনা করেছেন প্লেটো।

    প্লেটো বিশ্বাস করতেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় কোন স্বৈরাচারীর স্থান নেই। তিনি আরও বিশ্বাস করতেন সংগীত মানব জীবনকে পূর্ণতা দেয়। মানবিক গুণকে বিকশিত করে। নারীদের প্রতি প্লেটোর ছিল গভীর শ্রদ্ধা। তাদের শিক্ষা সম্মন্ধে তিনি উদার নীতিতে বিশ্বাস করতেন। দর্শনিক প্লেটোর আরেকটি দিক তাঁর কবিসত্ত্বা। তাঁর প্রবন্ধ গুলোর মধ্যে একদিকে যেমন প্রকাশ পেয়েছে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, অন্যদিকে ফুটে উঠেছে ভাষার লালিত্য। দর্শনের ভাষা যে এমন প্রাণবন্ত কাব্যগুণ সম্পন্ন হয়ে উঠতে পারে, প্লেটোর রচনা না পড়লে তা অনুভব করা যায় না। রচনা শৈলীর সৌন্দর্য আর বিশুদ্ধতায় প্লেটোর নাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্য স্রষ্টাদের পাশে উজ্জ্বল হয়ে আছে। দার্শনিক প্লেটো ছিলেন একেশ্বরবাদী। তাঁর দৃষ্টিতে ঈশ্বর মঙ্গলময় এবং তিনি মানুষের কল্যাণ করেন। তিনি দেবতাদের উদ্দেশ্যে পূজা উপসনাকে স্বীকার করেন নি। প্লেটোর মতে শিশুর ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী তাকে শিক্ষা দেওয়া উচিত, তাহলেই একদিন সে কালজয়ী বিশেষজ্ঞ হতে পারবে। শরীর ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ ও উন্নতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন তাঁর সবই শিক্ষার অর্ন্তভুক্ত। প্লেটো আরও বলতেন- বন্ধুর সাথে এরূপ ব্যবহার করো যাতে বিচারকের শরণাপন্ন হতে না হয়, আর শত্র“র সাথে এরূপ ব্যবহার করো যাথে বিচারকের দ্বারস্থ হলে তুমিই জয়ী হও।

    ৩.
    দার্শনিক, চিন্তবিদ প্লেটোর সুযোগ্য শিষ্য, শিক্ষা ও জ্ঞানতত্ত্বের আরও এক অন্যতম পুরোধা এরিস্টটল। তিনি জন্ম গ্রহণ করেন থ্রেসের অর্ন্তগত স্তাজেইরা শহরে। তাঁর পিতা ছিলেন একজন চিকিৎসক। নাম নিকোমাকাস। শৈশবে গৃহেই পড়াশোনা করেন এরিস্টটল। ১৭ বছর বয়সে পিতা-মাতাকে হারিয়ে গৃহত্যাগ করেন। ঘুরতে ঘুরতে তিনি এথেন্সে এসে উপস্থিত হন। এথেন্সে তখন প্লেটো গড়ে তুলেছিলেন নতুন এক শিক্ষা একাডেমি। সেখানে ভর্তি হলেন এরিস্টটল। অল্পদিনের মধ্যেই নিজের যোগ্যতায় তিনি হয়ে উঠলেন একাডেমির সেরা ছাত্র। প্লেটোও তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
    শিক্ষাদান ছাড়াও নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা কাজ করতেন এরিস্টটল। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর গভীর জ্ঞান, অসাধারণ পাণ্ডিত্যের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপেরও তা অজানা ছিল না। পুত্র আলেকজান্ডারের জন্মের পরই তাঁর শিক্ষার ভার অর্পন করেন এরিস্টটলের উপর। এরিস্টটল সে ভার গ্রহণ করেন। আলেকজান্ডার ছিলেন শ্রেষ্ঠ গুরুর দ্বিগি¦জয়ী ছাত্র । ঐতিহাসিকেরা ধারণা করেন এরিস্টটলের শিক্ষাই আলেকজান্ডারকে অদম্য মনোবল, লৌহকঠিন দৃঢ় চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল।

    এরিস্টটল একদিকে ছিলেন মহাজ্ঞানী, অন্যদিকে ছিলেন সার্থক শিক্ষক। তাই গুরুর প্রতি আলেকজান্ডারের ছিল অপরিসীম শ্রদ্ধা। তিনি বলতেন পিতার কাছে পেয়েছি আমার এই জীবন আর গুরুর কাছে শিক্ষালাভ করেছি কিভাবে এই জীবনকে সার্থক করা যায় তার জ্ঞান। আলেকজান্ডার যখন বিশ্বজয়ের অভিযান শুরু করেন এরিস্টটল ফিরে আসেন এথেন্সে। এথেন্সে এসেই একটি নতুন ধরনের স্কুল স্থাপন করলেন। তখন তার বয়স পঞ্চাশ বছর। স্কুলের নাম রাখা হল লাইসিয়াম। ৩২৩ খ্রিস্টপুর্বে বিশ্ববিজয়ী আলেকজান্ডারের আকস্মিক মৃত্যু হয়। এতদিন বীর ছাত্রের ছত্র ছায়ায় এরিস্টটল যে নিরুদ্বিগ্ন জীবন যাপন করছিলেন তাতে বিপর্যয় নেমে এল। কয়েকজন অনুগত ছাত্রের কাছ থেকে এরিস্টটল সংবাদ পেলেন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সক্রেটিসের অন্তিম পরিণতির কথা অজানা ছিল না এরিস্টটলের। তাই গোপনে এথেন্স ত্যাগ করে ইউরিয়া দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। কিন্তু এই স্বেচ্ছা নির্বাসনের যন্ত্রণা বেশিদিন ভোগ করতে হয়নি এরিস্টটলকে। ৩২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাঁর অকস্মিক মৃত্যু হয়। এরিস্টটলের নির্বাসন মৃত্যু হলেও তাঁর চিন্তা ও মনীষা এতোকাল ধরে আলোকিত করে আছে আমাদের এই পৃথিবীকে। শিক্ষা সম্পর্কে তিনি যে মন্তব্য রেখে গেছেন তা আজও আমাদের বিস্মিত করে। এরিস্টটলের মতে ‘সুস্থ্য দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা দেহ-মনের সুষম এবং পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তির জীবনের প্রকৃত মাধুর্য ও পরম সত্য উপলব্দিতে সহায়তা করে।

    সক্রেটিস বলেছিলেন কহড়ি ঃযু ংবষভ নিজেকে জানো। সেই প্রকৃত জ্ঞানী যে মনে করে আমি কিছুই জানি না। এভাবে সক্রেটিস যে জ্ঞান চর্চার সূচনা করেছিলেন তা প্লেটো ও এরিস্টটলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল।

    ৪.
    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) বিশ্বসাহিত্যের একজন অন্যতম পুরোধা। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে (বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ মে বৈশাখ) কলকাতার বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের জন্ম। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। পনের বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের প্রথম কবিতার বই ‘বনফুল’ প্রকাশিত হয়। এর দু বছর পর তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বিলাত যাত্রা করেন। তখন থেকেই ‘ভারতী’ পত্রিকায় বহু বিষয়ে তাঁর প্রসিদ্ধ প্রবন্ধগুলো প্রকাশিত হতে থাকে। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘সাধনা’ নামে একটি মাসিকপত্র প্রকাশ করেন। একে একে সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি পেয়েছেন অসাধারণ খ্যাতি। কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, রসরচনা – সাহিত্যের এমন কোন দিক নেই যেখানে রবীন্দ্রনাথের যাদুকরী প্রতিভার স্পর্শ পড়ে নাই। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের ইংরেজি অনুবাদের জন্যে সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্মাননা নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

    একজন শিক্ষা দার্শর্নিক হিসাবেও তাঁর ভূমিকা কোন অংশে কম ছিল না। তিনি ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতন ও ১৯২১ সালে বিশ্বভারতি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। তাঁর শিক্ষা বিষয়ক চিন্তা ভাবনাগুলো বিশেষ করে ‘শিক্ষা’, ‘শান্তিনিকেতন’,‘রাশিয়ার চিঠি’ প্রভৃতি গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে।

    রবীন্দ্রনাথ তাঁর শিক্ষাতত্ত্ব শিক্ষার্থীর ‘ভাললাগা মন্দলাগার’ উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছেন। তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি-‘বাল্যকাল হইতে আমাদের শিক্ষার সহিত আনন্দ নাই। কেবল যাহা কিছু নিতান্ত আবশ্যক তাহাই কণ্ঠস্থ করিতেছি। তেমনি করিয়া কোনো মতে কাজ চলে, কিন্তু মনের বিকাশ হয় না।’ রবীন্দ্রনাথ আরও বলেছেন-‘ আমরা বাল্য হইতে কৈশোর এবং কৈশোর হইতে যৌবনে প্রবেশ করি কেবল কতগুলো কথার বোঝা টানিয়া। সরস্বতীর সাম্রাজ্যে কেবলমাত্র মজুরি করিয়া মরি, পৃষ্ঠের মেরুদণ্ড বাঁকিয়া যায় এবং মনুষ্যত্বের বিকাশ হয় না।’ ‘ যেখানে অধ্যাপকগণ জ্ঞানের চর্চায় স্বয়ং প্রবৃত্ত, সেখানেই ছাত্রগণ বিদ্যাকে প্রত্যক্ষ দেখিতে পায়, বাহিরে বিশ্ব প্রকৃতির আবির্ভাব যেখানে বাধাহীন অন্তরে সেইখানে মন সম্পূর্ণ বিকষিত। চাকরির অধিকার নহে, মনুষ্যত্বের অধিকারের যোগ্য হইবার প্রতি যদি লক্ষ্য রাখি, তবে শিক্ষা সম্মন্ধে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র চেষ্টার দিন আসিয়াছে, এ বিষয়ে সন্দেহ নাই। সুশিক্ষার লক্ষণ এই যে, তাহা মানুষকে অভিভূত করে না, তাহা মানুষকে মুক্তি দান করে।’

    তাই তিনি প্রচলিত প্রাণহীন কৃত্রিম শিক্ষা ব্যবস্থার বদলে শিশুদের জন্য এক আনন্দময় স্বচ্ছন্দ জীবনপ্রবাহ বইয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি শিক্ষার্থীদেরকে চিন্তার স্বাধীনতা, ভাবের স্বাধীনতা ও ইচ্ছার স্বাধীনতা দেয়ার ও সেই সাথে শৃঙ্খলার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন মুক্ত উদার পরিবেশেই শিশুর দেহ ও মনের স্বচ্ছন্দ বিকাশ হয়। তাই তিনি প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ রেখে শিক্ষা দেবার কথা বলেছেন। এই সংযোগ শুধু ভাবের বা খেলাধূলার মাধ্যমে নয় বরং কাজের মাধ্যমেও হতে পারে। তাই পশুপাখি পালন, বাগান করা, কৃষি কাজ এগুলোকেও তিনি শিক্ষার অঙ্গ করেছেন। তিনি শিক্ষাকে আনন্দময় করার জন্য বিভিন্ন রকম খেলা নাটকাভিনয়, সঙ্গীত, নৃত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্য ইত্যাদি চর্চার ব্যবস্থা করেছিলেন। শিক্ষার্থীকে নাগরিক জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের উপযুক্ত করার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় প্রশাসনে অংশ নেবার সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ সাধারণ শিক্ষার সাথে বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
    রবীন্দ্রনাথ মানবতাবাদী কবি ও চিন্তক। জীবনের একটা সময় পাশ্চাত্যের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। পরে অবশ্য তাঁর সে মোহভঙ্গ ঘটে। মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি শিক্ষার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাই তাঁর মতে শিক্ষার লক্ষ্য হলো মনুষ্যত্বের বিকাশ। অর্থাৎ শিশুর মধ্যে যে শক্তি সম্ভাবনা হিসেবে সুপ্ত আছে তারই পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে হবে। পরিপূর্ণ বিকাশ বলতে তিনি শিশুর ব্যক্তিগত গুণাবলীর বিকাশ, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি জাগানো, সামাজিক গুণের বিকাশ এবং ধর্মীয় মনোভাব জাগনোর কথা বুঝিয়েছেন।

    রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে সেইসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন যেগুলোর মাধ্যমে মানব সংস্কৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় হতে পারে। এজন্য তিনি ভাষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সঙ্গীত, নৃত্য, দর্শন, পল্লী উন্নয়নমুলক অন্যান্য সামাজিক কাজ এসব কিছুই শিক্ষাক্রমের অর্ন্তভূক্ত করেছেন। তিনি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার ব্যবহারে জোর দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের জীবনকেও বলা যায় একটি মহাজীবন। তিনি তাঁর জীবনাভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই তাঁর শিক্ষাদর্শনকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ জীবনকে দেখেছিলেন সত্য অন্বেষণের একটি সংগ্রাম হিসেবে। কবির ভাষায়- সত্য যে কঠিন তাই কঠিনেরে ভালবাসিলাম/ সে কখনো করে না বঞ্চনা।

    ৫.
    ভারত উপমহাদেশের অন্যতম এক জ্ঞান সাধক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন কিংবদন্তি পুরুষ। বিশেষত শিক্ষা ও গবেষণার জগতে এমন একাগ্রচিত্ত মানুষ সত্যিই বিরল। তাঁর জন্ম ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই বর্তমান ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার পেয়ারা গ্রামে। শহীদুল্লাহর পিতা মফিজুদ্দীন আহমদ চার পাঁচটি ভাষা জানতেন। শহীদুল্লাহ শিখেছিলেন আঠারটি ভাষা। শৈশবেই তাঁর মেধার বিকাশ ঘটেছিল। আর একটা ঝোঁক ছিল নানান ভাষা শেখার। ১৯০৪ সালে তিনি হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দু’বছর পর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষা দেন। ১৯০৬ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত সংস্কৃতে বিএ অনার্স কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি সংস্কৃত পড়তে চাইলে সংস্কৃত বিভাগের গোঁড়া হিন্দু পণ্ডিতরা মুসলমান ছাত্র বলে তাঁকে সংস্কৃত পাঠদানে অস্বীকৃতি জানান। সে সময়ে স্যার আশুতোষ মুখোপধ্যায়ের হস্তক্ষেপে তাঁর জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বিভাগ চালু করে তাঁর শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করেন। তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে তিনি ১৯১২ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৪ সালে তিনি সীতাকুণ্ড ইংরেজি হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ এসিসট্যান্ট হিসেবে কাজে যোগ দেন। দু’বছর পর ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিযুক্ত হন। এখানে যোগদানের পর বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায় ভাষাতত্ত্বের উপর তাঁর একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধগুলি গবেষকদের দৃষ্টি আর্কষণ করে। এখানে শিক্ষকতার সময় ১৯২৬ সালে তিনি ইউরোপে গিয়ে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা, তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব, পালি, সংস্কৃত, তিবেতীয়, প্রাচীন পারসীয় ও প্রাচীন জার্মান ভাষার উপর গবেষণা করেন। ১৯২৮ সালে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে ফিরে আসেন। ১৯৩১ এ প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম প্রবন্ধের বই ‘ভাষা ও সাহিত্য’। এ সময়ে তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘রকমারী’.‘হাদিসের বাণী’,‘ইকবালের কবিতা’,‘ওমর খৈয়ামের রুবাই’ ও একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ১৯৩৬ সালে তিনি বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। ১৯৫৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ড. শহীদুল্লাহ বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ মনোনীত হন। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৫৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদক লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে যান করাচিতে উর্দু উন্নয়ন সংস্থায় উর্দু অভিধানের সম্পাদক হিসেবে। এসময়ে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বুড্ডিস্ট মিস্টিক সংস’ প্রকাশিত হয়। ১৯৬০ সালে করাচি থেকে ফিরে আসেন। যোগদান করেন বাংলা একাডেমিতে। এ সময়ে প্রকাশিত বই ‘বাংলা সাহিত্যের কথা’,‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’ প্রভৃতি। তাঁর আশিতম জন্ম দিনে তাঁকে দেয়া হয় জাতীয় সংবর্ধনা। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্মানসূচক প্রফেসর অব এমেরিটাস নিযুক্ত হন।

    ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ শুধু শিক্ষকতা ও গবেষণার ক্ষেত্রে নন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবির ক্ষেত্রেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। একজন উঁচুমানের পণ্ডিত ও বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ উপমহাদেশের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তাঁর সমকালীন অন্যকোন দেশীয় ভাষাতত্ত্ববিদ এতসংখ্যক ভাষায় ব্যুৎপন্ন ছিলেন না। তিনি বাংলা, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, ফারসি, তিব্বতি, সিংহলি, হিন্দি, আরবি, র্উদু, পশতু, তামিল, তেলেগু, ওড়িয়া, কানাড়া, সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষায় ছিলেন পারদর্শী। তাঁর এই বহু ভাষা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন ঐতিহাসিক তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব চর্চায় বিশেষ সহায়ক হয়েছিল। তাঁর লেখনীতে বিভিন্ন ভাষার জটিলতম সমস্যার গ্রন্থিমোচন, নবতর ব্যাখ্যা ও উদ্ভাবন শক্তির প্রকাশ লক্ষ্যণীয়। তিনি বাংলা, ইংরেজি, ফরাসি ও উর্দু – এই চার ভাষায় প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচনা করেন।

    ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করতেন দেশে সার্বজনীন শিক্ষার প্রয়োজন। কেননা শিক্ষা ছাড়া গণতন্ত্র অচল। সে সর্বাধিক ঘৃণিত ব্যক্তি যে নিজে শিক্ষিত হয়ে অপরকে শেখায় না। দেশের সকল মানুষ লেখা পড়া করার সুযোগ না পেলে জাতি কখনো বড় হতে পারে না। তিনি সবাইকে শিখিয়েছেন নির্ভয়ে সত্য কথা বলতে এবং মানুষকে শ্রদ্ধা করতে। তাঁর মতে- মাতা, মাতৃভাষা আর মাতৃভূমি প্রত্যেক মানুষের পরম শ্রদ্ধার বস্তু। এই পরম সাধক মানুষটি ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ঢাকায় পরলোক গমন করেন।

    ৬.
    বাঙালির জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম একজন বহুমাত্রিক প্রতিভা। একাধারে তিনি যুগস্রষ্টা কবি, উঁচু মানের সঙ্গীতজ্ঞ, দু:সাহসী সাংবাদিক। সব কিছুর মধ্যেই আবার তিনি একজন সাধক ও চিন্তাবিদ। তাঁর জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ শে মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ, মাতার নাম জাহেদা খাতুন। তাঁর জন্মের সময়ে কাজী পরিবার অত্যন্ত দরিদ্রতায় নিপতিত হয়। এ জন্যে তাঁর নাম রাখা হয় দুখু মিয়া। অনেক দু:খ কষ্টের মধ্যে দিয়ে তাঁকে বেড়ে উঠতে হয়েছে। তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ পান। ১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীর ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন। ১৯২০ সালে সেনাবাহিনী থেকে ফিরে কলকাতায় সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতায় আত্মনিয়োগ করেন। মে মাসে এ কে ফজলুল হকের সান্ধ্য দৈনিক ‘নবযুগ’ এ যুগ্ন সম্পাদক পদে যোগদান করেন। ১৯২১ সালের এপ্রিল মাসে আলী আকবর খানের সঙ্গে কুমিল্লায় গমন ও আলী আকবর খানের ভাগ্নী সৈয়দা খাতুন ওরফে নার্গিস আসার খানমের সঙ্গে ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ২রা আষাঢ় তারিখে বিবাহ। বিবাহের রাত্রেই নজরুলের কুমিল্লা ত্যাগ। ডিসেম্বরের শেষ দিকে বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ রচনা। ‘বিদ্রোহী’ সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ ও মাসিক ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায় ছাপা হলে প্রবল আলোড়ন। ১৯২২ সালের ১২ আগস্ট নজরুলের নিজস্ব সম্পাদিত অর্ধ সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’ প্রকাশ, ধূমকেতুর জন্যে রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাণী। ২৬ শে সেপ্টেম্বর ধূমকেতুতে ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা প্রকাশ। এ বছরই ‘অগ্নিবীণা’ কাব্য ও ‘যুগবাণী’ প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশ। ‘যুগবাণী’ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত। ধূমকেতুতে প্রকাশিত ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ বাজেয়াপ্ত। নভেম্বরে নজরুলকে কুমিল্লায় গ্রেফতার ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেলে আটক। এই ‘ধূমকেতু’ পত্রিকাতেই নজরুল প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করেন ১৩ অক্টোবর ১৯২২ সংখ্যায়। ১৯২৩ সালের জানুয়ারি মাসে বিচার কালে নজরুল তাঁর বিখ্যাত ‘রানবন্দীর জবানবন্দী’ আদালতে উপস্থাপন করেন। বিচারে নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বসন্ত’ গীতিনাটক নজরুলকে উৎসর্গ করেন। নজরুলকে হুগলি জেলে স্থানান্তর। প্রতিবাদে মে মাসে নজরুলের অনশন ধর্মঘট। শিলং থেকে রবীন্দ্রনাথের টেলিগ্রাম এরাব ঁঢ় যঁহমবৎ ংঃৎরশব, ঙঁৎ ষরঃবৎধঃঁৎব পষধরসং ুড়ঁ. ডিসেম্বর মাসে জেল থেকে নজরুলের মুক্তি লাভ। ১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে মিসেস এম রহমানের উদ্যোগে কুমিল্লার আশালতা সেনগুপ্ত ওরফে প্রমীলার সঙ্গে নজরুলের বিবাহ। ১৯২৪ সালের আগস্টে ‘বিষের বাঁশী’ ও ‘ভাঙার গান’ প্রকাশ, সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত। শনিবারের চিঠিতে নজরুল বিরোধী প্রচারণার শুরু। নজরুলের প্রথম পুত্র আজাদ কামালের জন্ম ও অকালমৃত্যু। ১৯২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বরাজ দলের মুখপত্র হিসেবে ‘লাঙ্গল’ পত্রিকা প্রকাশ। এই লাঙল পত্রিকাতেই নজরুলের বিখ্যাত ‘সাম্যবাদী’ কবিতা প্রকাশ। বাংলাসাহিত্যে নজরুল প্রবল জনপ্রিয় ও জননন্দিত হন। রবীন্দ্রনাথসহ সমকালীন কবিরা নজরুলকে অভিনন্দন জানান। ১৯২৯ সালের জানুয়ারিতে কলকাতার এলবার্ট হলে নজরুলকে জাতীয় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। উদ্যোক্তা ‘সওগাত’ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, হবীবুল্লাহ বাহার প্রমুখ। সংবর্ধনা সভার সভাপতি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, প্রধান অতিথি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। ১৯৩০ সালে ‘প্রলয় শিখা’ প্রকাশ ও নজরুলের বিরুদ্ধে মামলা। সংগীত রচনায় আত্ম নিয়োগ। প্রায় ছয় হাজার সঙ্গীত রচনা করেন বলে ধারণা করা হয়। ১৯৩২ সালের নভেম্বরে সিরাজগঞ্জে ‘বঙ্গীয় মুসলিম তরুণ সম্মেলনে’ সভাপতিত্ব করেন। ১৯৪২ সালের ১০ জুলাই এক দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হন এবং ক্রমে নির্বাক হয়ে যান। ১৯৪৪ সালে বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকার নজরুল সংখ্যা (কার্তিক-পৌষ, ১৩৫১) প্রকাশ। ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নজরুল ইসলামকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ প্রদান করা হয়। ১৯৪৬ সালে নজরুলের সৃষ্টিকর্ম মূল্যায়ণে প্রথমগ্রন্থ কাজী আবদুল ওদুদ কৃত ‘নজরুল প্রতিভা’ প্রকাশ। ১৯৬০ সালে ভারত সরকার কর্তৃক নজরুলকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি প্রদান। ১৯৬২ সালের ৩০ শে জুন কবিপত্মী প্রমীলা নজরুলের পরলোক গমন ও চুরুলিয়ায় দাফন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সরকারের উদ্যোগে কবিকে সúরিবারে ঢাকায় আনয়ন। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডি লিট উপাধি প্রদান। ১৯৭৬ সালের ২১ শে ফেব্র“য়ারি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘একুশে পদক’ প্রচলন ও নজরুলকে প্রথম পদক প্রদান। ১৯৭৬ সালের ২৯ শে আগস্ট ঢাকা পিজি হাসপাতালে কবি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

    নজরুলের সাহিত্য সৃষ্টির সময়কাল স্বল্প হলেও সাহিত্যের পরিমাণ স্বল্প নয়। শিল্পমান সম্পন্ন বিপুল এক সাহিত্য ভাণ্ডার তিনি রেখে গেছেন। দু:সময়ে জাতিকে দিয়ে গেছেন মুক্তির নির্দেশনা। স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির কণ্ঠে তিনি দিয়েছেন অগ্নিমন্ত্র। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে তাই বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন – নজরুল বাংলার বিদ্রোহী আত্মা ও বাঙালির স্বাধীন ঐতিহাসিক সত্তার রূপকার। নজরুলের সমগ্র সাহিত্যে আছে এক বিপ্লবী ভাবাদর্শ। পরাধীনতার বিরুদ্ধে, শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে নজরুল চালিয়েছেন এক ক্ষুরধার চাবুক।

    শিক্ষা সম্পর্কে নজরুলের বহু বাণী আছে যে গুলো জাতির জন্যে দিক নির্দেশক। সেই বৃটিশ শাসনামলেই নজরুল বুঝতে পারেন – ‘বিজাতীয় অনুকরণে আমরা ক্রমেই আমাদের জাতীয় বিশেষত্ব হারাইয়া ফেলিতেছি। অধিকাংশ স্থলেই আমাদের এই অন্ধ অনুকরণ হাস্যস্পদ হইয়া পড়িয়াছে। নিজের শক্তি, স্বজাতির বিশেষত্ব হারানো মনুষ্যত্বের মস্ত অবমাননা। আমরা চাই আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি এমন হউক, যাহা আমাদের জীবন শক্তিকে ক্রমেই সজাগ, জীবন্ত করিয়া তুলিবে। যে শিক্ষা দেহমন দুইকেই পুষ্ট করে তাহাই হইবে আমাদের শিক্ষা। আমরা দেশ সেবক চিনিব ত্যাগে, বক্তৃতায় নয়। আমরা দেখিতে চাই কোন নেতার চেষ্টায়, কোন দেশ সেবকের ত্যাগে কতটি জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হইল। আমরা দেখিতে চাই আমাদের কতগুলি তরুণের বুকে এই মহাশিক্ষার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হইল। প্রাণশক্তি আর কর্মশক্তিকে একত্রীভূত করাই যেন আমাদের শিক্ষার বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হয়, ইহাই আমাদের একান্ত প্রার্থনা।

    তথ্যসূত্র:
    ১. সক্রেটিসের জবানবন্দি ও মৃত্যুদণ্ড -মূল প্লেটো, ভাষান্তর ড. সফিউদ্দিন আহমদ
    ২. দি হাড্রেড-মূল মাইকেল এইচ হার্ট
    ৩. রবীন্দ্র রচনাবলী – ঐতিহ্য প্রকাশিত
    ৪. নজরুল রচনাবলী – বাংলা একডেমি প্রকাশিত
    ৫. স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব – বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
    ৬. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ – ড. আনিসুজ্জামান
    ৭. সত্য বল সুপথে চল – এ কে মনজুরুল হক
    ৮. চযরষরঢ়ং ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ ২০০৮

    মহিবুর রহিম: সিনিয়র প্রভাষক।

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম