• শিরোনাম

    ‘পাসের হার কমেছে মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে’

    চিনাইরবার্তা ডেস্কঃ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মে ২০১৭

    মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।  শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা জানান। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কম হয়েছে। এটা কারও মনে প্রশ্ন আসতে পারে কেন কম হল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যথাযথভাবে যেন মূল্যায়ন হয় শিক্ষার্থীদের। এটাও একটা বড় অগ্রগতি হওয়া উচিৎ।

    ম্ল্যূায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণ তুলে ধরে নাহিদ বলেন, পরীক্ষার পর পরীক্ষকরা খাতা নিয়ে যান এবং ফলাফল জমা দেন। কিন্তু ‘অভিজ্ঞতায় দেখা যায়’- তারা ভালো করে খাতা দেখেন না।
    এ কারণে একটি পরীক্ষা পর্যালোচনা পর্ষদ করে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার ব্যবস্থা হয়। একই খাতা ২০টি ফটোকপি করে দেওয়া হয় দেশের ২০ জন সেরা পরীক্ষককে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আলাদাভাবে নম্বর নেওয়া হয়। দেখা যায়, ২০ জনই ২০ ধরনের নম্বর দিয়েছেন। দুইজনও একরকম দেননি। একজন ছাত্র ৪ পাচ্ছে, আরেকজন ছাত্র এখানে সাত পেয়ে যাচ্ছে। তাহলে কত পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে!
    শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগেই আমরা বলেছি, যিনি প্রধান পরীক্ষক, তিনি আসলে খাতা দেখেন না। এই একটা রিপোর্ট দিয়ে দেন। আবার যিনি খাতা দেখেন, তিনিও ভালো করে দেখেন না। বোঝা যায়, অনেক সময় তিনি এটা ওজন করে দিয়ে দিলেন, কত পাতা লিখেছে সেই পরিমাণে। এটা হলে তো সত্যিকার অর্থে আমাদের ছেলেমেয়েদের মূল্যায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না। এতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কিংবা সে একটা বাড়তি সুযোগও পেয়ে যেতে পারে।
    খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির উন্নয়নে তিন বছর ধরে কাজ করার কথা জানিয়ে নাহিদ বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে প্রধান পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে তাদের মাধ্যমে সারা দেশে সব পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবশেষে এ বছর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ‘একটি মান’ বজায় রাখার এই ব্যবস্থা চালু হয়।
    এ জন্য আমরা এই খাতাগুলো দেখে একটা উত্তরপত্র আগেই বাছাই করে আমাদের হেড এক্সামিনাররা বসে এবং দুই বার চেক করে একটা সাধারণ মান ঠিক করে দেন। সে অনুযায়ী পরীক্ষকরা খাতা মূল্যায়ন করেন।নাহিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি এবং দেশের শিক্ষাবিদদের সহযোগিতা নিয়েই মূল্যায়ন ব্যবস্থার এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমাদের তিন বছরের এই প্রচেষ্টার ফলাফল হচ্ছে, সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে খাতা দেখে আমরা ফলাফল আনতে পারছি। এতে ছেলেমেয়েরা আরও সিরিয়াস হবে। শিক্ষকরাও খাতা দেখা এবং পড়ানোর ক্ষেত্রে সিরিয়াস হবেন এবং এখানে আমরা সঠিক বাস্তবতা দেখতে পাব।

    পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি সংযুক্ত করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষক দ্বারা পরীক্ষা করানো হচ্ছে।
    পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাইয়ের এই নতুন সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত সময়োচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে পাশের হার কিছুটা কমে গেলেও পরীক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ে এটি যথার্থ কার্যকরী হবে। কৃতকার্য শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী। কাজেই তারা তাদের পড়াশোনায় একটু মানোযোগী হলেই আর ফেল করবে না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় এবছর এসএসসি পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের মাধ্যমে পরীক্ষা শেষের ৬০ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশে সমর্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা এবং শিক্ষাবোর্ডগুলোকেও ধন্যবাদ জানান।

    আটটি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন এ বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি) এবং সমমানের মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষার আজকের প্রকাশিত ফলে সার্বিক পাশের হার ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
    এ বছর ১৭,৮১,৯৬২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষার্থীয় অংশ গ্রহণ করে। যারমধ্যে ১৪,৩১,৭২২ জন শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন শিক্ষার্থী।
    শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অনুষ্ঠানে সকল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট এই ফলাফল হস্তান্তর করেন।
    পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাতক্ষীরা এবং শেরপুর জেলার ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

    সূএ-মানবজমিন

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম