| মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট ২০১৬
চারদিকে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ডাকে মুখরিত হওয়ার মাস জিলহজ। জিলকদ থেকেই প্রভুর আলোয়ে জমায়েত হতে শুরু করেছেন বিশ্বের মুসলিম। এ যেন এক মহামিলন একই মতাদর্শীদের। হৃদ্যতা সৃষ্টির এক অপূর্ব নিদর্শন এটি। হজ শব্দের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা। শরিয়তের পরিভাষায় কাবা গৃহ প্রদক্ষিণ, আরাফাত ও মুজদালিফায় অবস্থান ইত্যাদি ক্রিয়াকর্মকে হজ বলা হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাতে সাংসারিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত এ পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে, যা দিয়ে সে কাবা গৃহ পর্যন্ত যাতায়াত ও সেখানে অবস্থানের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া গৃহে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত পরিবারের ভরণ-পোষণ ও সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকলে তার ওপর হজ ফরজ হয়ে যায়। [মারেফুল কোরআন] পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে এটি চতুর্থ স্তম্ভ। এই ফরজ কাজটির ব্যাপারে তেমন একটা গুরুত্ব দিতে চান না অনেকেই। নানা অজুহাত দাঁড় করিয়ে থাকেন। বিশেষ করে আমাদের দেশের মুসলিমরা… এটিকে জীবনের অন্তিম অধ্যায়ের কর্ম বলে মনে করেন। মৃত্যুর দিনক্ষণ যে বলে-কয়ে আসে না এই কথাটি ভুলে বসে থাকেন। তাই আল্লাহপাকের আদেশের আওতায় পড়ে গেলে হজ কর্মটি সঠিকভাবে সম্পাদন করতে হবে। নয়তো ফরজ কাজ না করে মারা গেলে অনন্তকাল শাস্তি ভোগ করতে হবে।
অনেকে হজের ঝক্কি-ঝামেলা সহ্য করতে পারবেন না বলে হজে যেতে চান না। তারা কিন্তু দেশে-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে আনন্দিত হন। কোনো ভ্রমণ শ্রমবিহীন হয় না। দুনিয়াদারেরা তাই হজের ভ্রমণকে কষ্টের মনে করেন। আর আল্লাহওয়ালারা প্রেমময় প্রভুর ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। অন্যদিকে খেয়াল দেয়ার সময় তারা পান না। হজযাত্রীরা সবাই আল্লাহর মেহমান। তাই তাদের কোনো সমালোচনা করার অধিকার থাকার কথা নয়। কার মেহমান হওয়ার যোগ্যতা তার হেয়েছে সেটাই সর্বাগ্রে ভাবা দরকার। অনেকেই নানারকম অভিযোগের ঝড় তুলে হজকে কমজোরি করে ফেলেন। আল্লাহপাক হজে গিয়ে অনর্থক অশ্লীল কথাবার্তা, ঝগড়া, বিবাদ, পারস্পরিক বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ প্রেমিকরা যাত্রার বহু আগে থেকে গভীর আগ্রহে হজের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার কাজে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। তারা জানান, এ সফরে যা কিছু করবে তা দ্বারা পরকালের সফর সহজ হবে। হজের নিয়মাবলী না জানার কারণে হাজীরা নানারকম দুর্ভোগে পড়ে থাকেন। বিভিন্ন রকমের গাইড বই তাদের সংগ্রহে থাকে, তার পরও এটির পাতা উলটাতে তাদের তেমন দেখা যায় না। দুনিয়াবি কাজকর্ম গোছাতে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েন তা বলার নয়। মনগড়া কিছু আচার-অনুষ্ঠান বেশ আড়ম্বের সঙ্গে করার কাজে বেশ আনন্দ পান। তাই তারা হজে গিয়ে নানারকমের ভুল করে বসেন। আজ্ঞতার কারণে অনেকের ফরজ বাদ পড়ে যায়। ফরজ বাদ পড়লে হজ বাতিল হয়ে যায়।
তাই যাত্রার আগে হজের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দিকগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করব। সর্বাগ্রে জীবনের কৃতকর্মের জন্য মাফ চেয়ে এবং আগামীতে আর না করার জন্য প্রতিশ্র“তিবদ্ধ হব আল্লাহপাকের কাছে। রমণীদের অবশ্যই জামাত ও জুমার নামাজের নিয়ম-কানুন ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে প্রবেশের পর আদব-কায়দা সম্পর্কে উত্তম জ্ঞান থাকা দরকার। অনেকেই এখানে ঢুকে দুনিয়াবি প্রয়োজনীয় কথা-বার্তায় লিপ্ত হয়ে পড়েন যা নাকি খুবই গুনাহের কাজ। তাই মসজিদে থাকাকালীন এতেকাফের নিয়ত করে নিলে ভালো হয়। বাইতুল্লাহর হজের প্রতিটি কার্যক্রম আমাদের বিশেষ শিক্ষা প্রদান করে থাকে। পুরুষদের এহরামের পোশাক শেলাইবিহীন কাফনের কাপড়ের মতো। এহরাম বাঁধার সময় লাব্বাইক বলার সঙ্গে সঙ্গে এ কথাই মনের মধ্যে আনতে হবে, সে যেন বিচারের দিনে উপস্থিত হয়েছে। শিঙ্গার ফুঁক শুনে করব থেকে উঠে সবার মতো সেও কেয়ামতের মাঠে হাজির হয়েছে। বিচারকার্য সমাপনান্তে সে কি মুক্তিপ্রাপ্তদের দলভুক্ত নাকি সাজাপ্রাপ্তদের দলে? এমনি ভাবনা তখন ভাবতে হবে যে, সঠিকভাবে হজ পালন করতে পারবে কিনা।