• শিরোনাম

    সৎকর্ম ও সেবা দিয়ে মন জয়ের ধর্ম

    | রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

    সৎকর্ম ও সেবা দিয়ে মন জয়ের ধর্ম

    ওয়াল্লাজিনা জাহাদু ফীনা লা নাহ্দিয়ান্নাহুম সুবুলানা। আল্লাহ বলেন, যারা আমার জন্য জিহাদ করে তাদের আমাকে পাওয়ার পথ দেখাই’।

    ইসলামে জিহাদের কথা আছে। আর সে জিহাদ হল প্রতিরোধের জিহাদ। প্রতিশোধ কিংবা কাউকে সন্ত্রস্ত করে কোনো আদর্শ প্রচার ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের দাবি হল ‘ইদফাআ বিল্লাতি হিয়া আহ্সান’ সুন্দর কর্ম দিয়ে মানবতার সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করা। এরপর যদি কেউ ইসলাম গ্রহণ করতে চায় তাকে স্বাগত জানিয়ে ইসলামে দীক্ষিত করা। জোর-জবরদস্তি করে চাপিয়ে দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ইসলামে দীক্ষিত করা নিষিদ্ধ। ‘লা ইকরাহা ফীদদ্বীনি, দ্বীনে ইসলামে কোনো বাড়াবাড়ি নেই’। সন্ত্রাস বা চরমপন্থা হল জোর করে অধিকার বিস্তারের নাম। আর যুদ্ধ-জিহাদ বা সংগ্রাম হল নিজের অধিকার আদায় বা রক্ষা করার নাম। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, আপনার আঙ্গিনায় যে মুরগিটি তার সদ্য স্ফূটিত বাচ্চাগুলো নিয়ে খাবার সন্ধান করছে, অনেক সময় দেখবেন অনেক উঁচু থেকে চিল ছোঁ মেরে বাচ্চা নিয়ে যেতে চাইলে মুরগি কুক কুক করে বাচ্চাদের ডানার নিচে লুকিয়ে রাখে, এরপরও আবার মুরগিকে চিল ছোঁ মারলে সে তেড়ে গিয়ে চিলকে আক্রমণ করে বাচ্চাদের রক্ষা করে। এটার নামই জিহাদ। এখানে চিলের কাজটি চরমপন্থা বা সন্ত্রাসের সঙ্গে আর মুরগির কাজটি নিজের অধিকার রক্ষায় জিহাদের সঙ্গে আমরা তুলনা করতে পারি।

    ইসলাম একটি মধ্যপন্থী দ্বীন বা শরিয়ত লালন করে। এখানে বাড়াবাড়ির কোনো স্থান নেই। এক সময় নবী (সা.) পাশাপাশি তিনটি রেখা টেনে সাহাবিদের বললেন, এই ডান পাশের রেখাটির অনুসারী আর বাম পাশের রেখাটির অনুসারীরা জাহান্নামি আর মধ্যবর্তী রেখাটির অনুসারীরা জান্নাতি এটাই সিরাতুল মোস্তাকিম সহজ-সরল নাজাতের পথ।

    কোনো চরমপন্থাই সাফল্য বয়ে আনে না। এ প্রসঙ্গে মহামতি বুদ্ধের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। একদা শ্রোণ নামে এক রাজপুত্র আত্মার মুক্তি আর মনের প্রশান্তির জন্য ভোগ-বিলাস ও প্রাচুর্য ছেড়ে বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বুদ্ধের দীক্ষা নেয়ার পর কঠিন তপস্যায় শ্রোণের ৬ মাস বা ১৮০ দিন সাধনায় কাটার পর বুদ্ধ তার মুখোমুখি হয়ে বললেন : বৎস শ্রোণ! আমি শুনেছি যে, যখন তুমি রাজপুত্র ছিলে তখন তুমি খুবই সুন্দর বীণা বাজাতে, কথাটা কি সত্যি? শ্রোণ বলল : হ্যাঁ গুরুদেব সত্যি; লোকেরা বলত আমার মতো বীণা বাজাতে পারে এমন দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি আমাদের রাজ্যে নেই। এবার বুদ্ধ বললেন : তাহলে তোমার কাছে আমি একটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই- আমার মনে হয় তুমি সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। প্রশ্নটি হল : যদি বীণার তার খুব ঢিলে করে বাঁধা হয় তবে কি বীণায় সঙ্গীতের সুর বাজবে? বুদ্ধের এ প্রশ্ন শুনে শ্রোণ হাসতে হাসতে বললেন, ‘গুরুদেব এটা তো সবাই জানে যে, যদি বীণার তার ঢিলে করে বাঁধা হয় তবে সেখান থেকে সুর আসবে না, কারণ ঢিলে তারে সুর সৃষ্টি হয় না, কেউ ঢিলা তার থেকে সুর বের করে আনতে পারবে না। শ্রোণের বক্তব্য শুনে বুদ্ধ আবার বললেন : ‘আর যদি বীণার তার খুব শক্ত করে বাঁধা হয়, তাহলে? উত্তরে শ্রোণ বললেন, বীণার তার খুব শক্ত করে বাঁধলেও তা থেকে সুর বেরোবে না, কারণ সেটি স্পর্শ করলেই ছিঁড়ে যাবে। তখন বুদ্ধ বললেন : তাহলে কখন সুর বেজে উঠবে? শ্রোণ বলেন : ‘সুর তখনই বেজে উঠবে যখন বীণার তার খুব শক্ত করেও বাঁধা থাকবে না, আবার ঢিলা করেও বাঁধা থাকবে না; বরং এ দুইয়ের মাঝখানে একটি অবস্থান আছে, তারটিকে সেখানে স্থির করে বাঁধলেই বীণা থেকে সুরলহরী বের হয়ে মানুষকে মোহিত করবে। এবার মহামতি বুদ্ধ বলেন, বেশ বলেছ বাছা! আমি উত্তর পেয়ে গেছি এবং আমি তোমাকে এই কথাটিই বলতে চাচ্ছি- তুমি যেমন বীণা বাজানোর উস্তাদ, তেমনি আমিও জীবন বীণা বাজানোর ওস্তাদ এবং এই বীণা বাজানোর যে নিয়ম, মানুষের জীবনবীণা বাজানোর নিয়মও তাই। এ জীবনবীণার তার যদি খুব ঢিলে করে বাঁধা হয় তবুও সুর বাজবে না, আবার যদি খুব কঠিন করে বাঁধা হয় তবুও তাতে সুর বাজবে না। যিনি জীবনবীণার সুর সৃষ্টি করতে চান তাকে অবশ্যই দেখে নিতে হবে তার জীবনবীণার তার মধ্যাবস্থায় সঠিক স্থানে বাঁধা আছে কিনা। মানুষের মন সর্বদা অতিরঞ্জন খোঁজে এবং তার মধ্যেই সে ঘোরাফেরা করে এক অতিরঞ্জন থেকে আরেক অতিরঞ্জনের দিকে। মানুষের মন কখনই মধ্যবস্থায় থাকতে চায় না।

    মানুষকে এই মধ্যাবস্থায় রাখার জন্যই যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ পৃথিবীতে এসেছেন; সর্বশেষ পয়গাম্বর ছিলেন আমাদের নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তারপর আর কোনো নবী আসবেন না। তিনিই শরিয়তে মোহাম্মদীর মাধ্যমেই ইসলামের পূর্ণাঙ্গতা বিকশিত করেছেন। যার সাক্ষ্য বিদায় হজের ভাষণ শেষে অহির মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়েছেন, ‘আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম আর এই দিবসে পরিপূর্ণ করে দিলাম তোমাদের দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা। ওয়া আতমামতু আলাইকুম নি’মাতি আর আমার নেয়ামতে তোমাদের ভরপুর করে দিলাম। নবুয়তের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই দায়িত্ব বর্তেছে নায়েবে নবীর কাছে। যারা মানবজীবন বীণার সুরলহরী সৃষ্টির মধ্যপন্থী অবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। কোরআনের এই বাণীগুলো যথাযথ নায়েবে নবীদের মাধ্যমে যদি আমরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারি তবেই আমাদের সমাজের সব ফিতনা-ফ্যাসাদ দূর হয়ে যাবে।

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    ইসরাইলে শব্দ করে আজান নিষিদ্ধ

    ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম