• শিরোনাম

    সব সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার

    | সোমবার, ০১ আগস্ট ২০১৬

    সব সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার

    আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মোমিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করবে তার শাস্তি হল জাহান্নাম, সেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে, আল্লাহ তার প্রতি ক্রোধান্বিত, তার ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত এবং তার জন্য কঠোর শাস্তি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে (সূরা নিসা, আয়াত-৯৩)। আল্লাহ আরও বলেন, কোনো মোমিন কোনোভাবেই ভুলক্রমে ছাড়া কোনো মোমিনকে হত্যা করতে পারে না (সূরা নিসা, আয়াত-৯২)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনের সূরা মায়িদার ৩২নং আয়াতে ঘোষণা করেছেন- যে ব্যক্তি কাউকে নিহতের বদলা বা সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণে শাস্তি ব্যতীত হত্যা করল সে যেন সব মানব জাতিকে হত্যা করল, আর যে মানুষকে বেঁচে থাকতে দিল সে যেন সব মানুষকে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিল। আল্লাহ পাক আরও বলেন, তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কর না নিশ্চয় আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না (কাছাছ-৭৭)। আরও বলেন, তোমরা সেসব অপরাধীদের আদেশ মান্য করবে না যারা পৃথিবীতে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, সংশোধনমূলক কিছু করে না (সূরা শুয়ারা-১৫১)। নবী (সা.) বলেছেন, দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকেও আল্লাহর নিকট গুরুতর অপরাধ হল কোনো মুসলিমকে হত্যা করা (তিরমিজি)। নবী (সা.) বলেন, মুসলমান সে ব্যক্তি যার জিহ্বা ও হাতের অনিষ্ট থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ। মুহাজির সে ব্যক্তি যে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে (বুখারি)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মামউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকি অর্থাৎ কবিরা গুনাহ আর কোনো মুসলমানকে হত্যা করা কুফরি (মুসলিম)। নবী (সা.) বলেছেন, সব সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। যে আল্লাহর পরিবারের সদস্যদের প্রতি ভালো ব্যবহার করে আল্লাহ তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। এভাবে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে খোদার সৃষ্টিকে ভালোবাসতে বলা হয়েছে। বাস্তব জীবনেও নবী (সা.)-এর উদাহরণ হয়ে রয়েছেন। যেমন- তায়েফে দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে নবী যখন পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত হলেন জিবরাইল (আ.) তখন নবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আপনি শুধু অনুমতি দিন পাহাড় দিয়ে চেপে তায়েফের অধিবাসীদের ধ্বংস করে দিই। নবী (সা.) বললেন, মানুষ ধ্বংস হয়ে গেলে কাদের কাছে আমি দ্বীনের দাওয়াত প্রচার করব? নবীজী অনুমতি দিলেন না। মাতৃভূমি থেকে মক্কার কাফিররা নবী (সা.)কে নির্যাতন করে বিতাড়িত করে। নবীজী জন্মভূমি ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন। যেদিন মক্কা বিজয় হল নবী (সা.) প্রতিশোধ নেয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকার পরও সবার জন্য ক্ষমা ঘোষণা করেন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম অন্যায় হত্যার সূচনা করে আদম (আ.) পুত্র কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যার মাধ্যমে। আর তাই পৃথিবীতে যতগুলো অন্যায়ভাবে হত্যা হবে তার প্রতিটির একটি পাপ তার ওপর পড়বে। হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে অর্ধ পৃথিবী মুসলমানদের অধিকারে আসে। যদি তলোয়ার দিয়ে কাউকে ধর্মান্তরিত করার বিধান থাকত তাহলে এ অর্ধ পৃথিবীতে কোনো অমুসলিম খুঁজে পাওয়া যেত না। দীর্ঘকাল এ ভারতীয় উপমহাদেশ মুসলিম শাসকদের অধীনে শাসিত হয়। সৈন্য বাহিনীসহ সব ছিল মুসলিম শাসকের অধীন। হত্যা, বিশৃংখলা ও জোর করে ধর্মান্তরিত করার বিধান থাকলে ভারতীয় উপমহাদেশে অন্য ধর্মাবলম্বীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেত না। ইসলাম প্রচার হয়েছে নৈতিক আদর্শ দিয়ে। গায়ের জোরে প্রচার হলে মনের দিক থেকে কেউ আদর্শ মেনে নিত না। আর বুঝে শুনে মনের দিক থেকে মেনে না নিলে তা কখনও স্থায়ী হতো না। ইসলামের শত্রুরা শিয়া-সুন্নি ইত্যাদি গোত্রীয় বিরোধ, মাযহাবি-লা-মাযহাবি ইত্যাদি মতাদর্শগত বিরোধ লাগিয়ে মুসলমানদের দিয়ে মুসলমানদের বিনাশ করার চেষ্টা করছে, এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। তাই আমাদের ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

    লেখক : অধ্যক্ষ, ফুলগাঁও ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, লাকসাম, কুমিল্লা

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম