সিবিবার্তা ডেস্কঃ | সোমবার, ২৮ আগস্ট ২০১৭
তিন বছর আগে একদিন শহিদুল ইসলাম হাটে গিয়ে দেখেন, একটি বাছুর বিক্রি হবে। রং কালো। বেশ নাদুসনুদুস। এক দেখাতেই বাছুরটি তার মনে ধরে। কোনো কিছু চিন্তাভাবনা না করেই বাচ্চা গরুটি কেনার সিদ্ধান্ত নেন। শেষমেশ দর-কষাকষির পর ২৪ হাজার টাকায় আবদুল মুন্নাফের বাছুরটি কিনে তিনি সোজা বাড়ি আসেন।
এরপর শহিদুলের মা রাবেয়া বাছুরটিকে পালতে শুরু করেন। কিছুদিন পর গরুটির কিছু আচরণে মুগ্ধ হন রাবেয়া। সামনে যেতে বললে সামনে যায়, পেছনে যেতে বললে পেছনে যায়। এভাবেই ‘কথা শোনা’ এমন গরুটিকে ভালোবেসে ফেলেন বাড়ির সবাই। চোখের সামনে দিনে দিনে গরুটি হাতির মতো বড় হতে থাকে।
এবার সেই গরুটিকে পাবনা সাঁথিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে চার দিন আগে ঢাকার আফতাব নগর হাটে এনেছেন শহিদুল। দাম হাঁকিয়েছেন আট লাখ টাকা। এ গল্প শোনালেন শহিদুল, আজ রোববার দুপুরে।
বয়স ৪০ বছর হলেও বিয়ে করা হয়নি শহিদুলের। দুই ভাই, পাঁচ বোন তাঁরা। ছোট ভাই মোহাম্মদ সজলকে সঙ্গে নিয়ে গরু পোষেন শহিদুল। এটাই তাঁদের পেশা। এ বছর ১২টি গরু নিয়ে ঢাকার হাটে এসেছেন তিনি। এই নিয়ে ১৫ বার কোরবানির সময় ঢাকায় গরু নিয়ে এলেন তিনি।
গরুটির কথা বলতে গিয়ে শহিদুল বারবার মা রাবেয়ার কথা বলছিলেন। তাঁর বয়স এখন ৬২ বছর। শহিদুল বললেন, ‘মা এই গরুটির প্রতি আলাদা যত্ন-খাতির করতেন। এই গরুটি তাঁর কথা শুনত। তেমন ছোটাছুটি করেনি। এমন অনেক দিন গেছে যে গরুটির গলা থেকে দড়ি খুলে গেছে কিন্তু ছুট দেয়নি।’
শহিদুলের কথা অনুযায়ী, এখন প্রতিদিন গরুটির খাওয়ানোর পেছনে খরচ হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ভুসি, চিটা গুড়, খৈল, লবণ ইত্যাদি খাবার খাইয়ে তাঁকে বড় করে তোলা হয়েছে। প্রতিদিন ভুসি খায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ কেজি।
রামপুরা সেতুর পূর্ব পাশেই আফতাব নগর গরুর হাটের অবস্থান। জানা গেল, বুধবার থেকে হাটে গরু আসছে। রাস্তার দুই পাশে বাঁধা সারি সারি গরু। আজ রোববার দুপুরে দেখা গেল, শহিদুলের গরুটিকে ঘিরে আছেন ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ।
একজন ক্রেতা শহিদুলের কাছে জানতে চান, কত দাম হলে তিনি গরুটি বিক্রি করে দেবেন? শহীদুল বললেন, আট লাখ টাকা হলে বিক্রি করবেন। যিনি ভালো দাম দেবেন, তাঁর কাছেই প্রিয় গরুটিকে কোরবানির জন্য দিয়ে যাবেন।
শহিদুল বললেন, ‘ও বড় ভালো গরু। ও সন্তানের চেয়েও বেশি কিছু।’
সূএ-প্রথম আলো