• শিরোনাম

    লন্ডনে গ্রেনফেল টাওয়ারের আগুনে নিহত ৭৯

    সিবিবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক : | মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০১৭

    লন্ডনে গ্রেনফেল টাওয়ারের আগুনে নিহত ৭৯

    গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় ৭৯ জনকে নিখোঁজ হিসেবে শনাক্ত করে তাদের সম্ভাব্য মৃত্যুর কথা জানিয়েছে পুলিশ। এর আগে সবশেষ ৫৮ জনকে নিখোঁজ শনাক্ত করে পুলিশ জানিয়েছিল, সম্ভবত তাদের কেউ বেঁচে নেই। পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এই খবর দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, সামনের কয়েক সপ্তাহ উদ্ধার অভিযান চলাকালে এই সংখ্যায় পরিবর্তন আসতে পারে, তবে তা ব্যাপক হবে না।

    বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমান্ডার স্টুয়ার্ট কান্ডি এক বিবৃতিতে নিহতের সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং এ সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন। গত ১৩ জুন লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ আগুন লাগে। ২৪ তলা এ ভবনটিতে আগুন লাগার কারণ এখনও জানা যায়নি। কান্ডি তার বিবৃতিতে শোকপ্রকাশ করে বলেছেন, ভবনের প্রত্যেকটি পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অন্তত একজন সদস্যকে হারিয়েছে। তবে নিহতদের বেশিরভাগেরই পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। অনুসন্ধান কাজ শেষ হতে বেশ কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে বলে জানান তিনি। এই ঘটনার একটি ব্যাপক তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে লন্ডন পুলিশ। কীভাবে লন্ডনের একটি ২৪ তলা ভবনে এত দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে এত মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারল, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।

    অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের সময়মতো সাহায্য করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আগুনের তাণ্ডবে ভবনটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গ্রেনফেল টাওয়ারের ভয়াবহ আগুনকে নিছক একটি দুর্ঘটনা বলে মানতে পারছে না ব্রিটিশরা। একে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি হিসেবে দেখছে তারা। এখন পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে কেবল পাঁচজনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন মুখপাত্র কমান্ডার স্টুয়ার্ট ক্যান্ডি বলেছেন, গত ৪৮ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণ আর অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে বোঝা গেছে, যারাই নিখোঁজ হয়েছে; ধরে নিতে হবে তারা আর কেউ বেঁচে নেই।

    তিনি বলেন, এ এক জটিল সময়। দুঃখের সঙ্গে এখন আমাকে বলতে হচ্ছে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। যে ৭৯ জন নিখোঁজ রয়েছে তাদের সম্ভাব্য মৃত্যুকে স্বীকার করে নিতে আমাদের। স্থানীয় এক কমিউনিটি ব্লগ গ্রেনফেল টাওয়ারের সম্ভাব্য আগুনের ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক করেছিল দেড় বছর আগে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ থাকা এক বস্তু ভবনটির সংস্কার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। লন্ডনবাসী মনে করছে, টেরিজা মে সরকারের আবাসন মন্ত্রণালয় আগুনের ঝুঁকিজনিত নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। ১৯৭৪ সালে নির্মিত ভবনটিতে ১২০টি ফ্ল্যাট ছিল।

    বিভিন্ন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ওই ভবনে ৪০০ থেকে ৬০০ মানুষের বসবাসের কথা জানিয়েছে। তবে আগুন লাগার পর ঠিক কতজন বের হতে পেরেছে বা কতজন আটকা পড়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। ভবনের ভেতরে বহু মানুষের জিম্মি হয়ে থাকার খবর জানিয়েছিল প্রত্যক্ষদর্শীরা। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের বিশেষ ব্যবস্থায় নেওয়া ছবিতে দেখা গেছে, বিতর্কিত বৃষ্টিপ্রতিরোধী প্রলেপে মোড়ানো ভবনটিতে এখন সারি সারি ভস্মীভূত বস্তু। উদ্ধারকাজের দ্বিতীয় দিনেই পুড়ে যাওয়া আসবাবগুলোর এমন অবস্থা যে, বোঝার উপায় ছিল না কোনটা কী জিনিস। ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ভস্মীভূত জানালা, গলে যাওয়া টেবিল আর বিভিন্ন আসবাবের সমাহার।

    দেখা গেছে, অর্ধেক কাপড়ে ভর্তি ওয়াশিং মেশিন, যেন ভবনের বাসিন্দাদের জীবনের আর্তির এক আধমরা সাক্ষী। এসব ভস্মীভূত বস্তুর মধ্যে যে মানুষের মরদেহ নেই তা কে বলতে পারে? মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার স্টুয়ার্ট কান্ডি আগেই স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন, নিহতদের সবার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেছেন, দুঃখজনক হলেও একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে; নিহতদের প্রত্যেককে বোধহয় শনাক্ত করতে পারব না আমরা।

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম