• শিরোনাম

    ইউনৃসের বিরুদ্ধে জয়ের অভিযোগ

    হিলারিকে দিয়ে হাসিনাকে হুমকির তদন্ত মার্কিন সিনেটে

    সিবিবার্তা অনলাইন ডেস্কঃ | রবিবার, ০৪ জুন ২০১৭

    হিলারিকে দিয়ে হাসিনাকে হুমকির তদন্ত মার্কিন সিনেটে

    বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত আটকাতে হিলারি ক্লিনটন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদের প্রভাব খাটানো সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ সংক্রান্ত সিনেট কমিটি। সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্রাসলে এই বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর চেয়ে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে।

    গত ১ জুন লেখা ওই চিঠিতে গ্রাসলে আগামী ১৫ জুনের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন। এতে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন দূতাবাসের উপ-প্রধান জন ডানিলোউইক যাতে কমিটির কর্মকর্তাদের কাছে সাক্ষাৎকার দেয়; সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আগে সজীব ওয়াজেদ জয় অভিযোগ করে আসছিলেন, তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চাপে রাখতে এবং ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত আটকাতে হিলারির কর্মকর্তারা তাকেও হুমকি দিয়েছিল।

    নোবেলজয়ী বাংলাদেশি ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটনের পারিবারিক বন্ধু; ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে ইউনূসের লাখ ডলার তহবিল জোগানোর পাশাপাশি ইউনূসকে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের তহবিল জোগাতে হিলারির প্রভাব খাটানোর অভিযোগও যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে এসেছে। সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান গ্রাসলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনকে পাঠানো চিঠির সঙ্গে জয়ের বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব চাওয়ার হুমকি দেওয়া বিষয়ক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনও যুক্ত করে দিয়েছেন।

    জয় বলে আসছেন, তিনি বৈধভাবে ১৭ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে এলেও কখনও কোনো সমস্যার মুখে পড়েননি। কিন্তু ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানোর পর ওই সময় পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ এনে তদন্ত শুরুর হুমকি দিয়েছিলেন।

    গত ১ জুন পাঠানো চিঠিটি নিজের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করেছেন সিনেটর গ্রাসলি। তাতে ‘ব্যবসায়ী’ ইউনূসের জন্য ‘বিশেষ খাতিরের’ অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে কমিটির সামনে হাজির হওয়ার জন্য ঢাকায় তখন কাজ করে যাওয়া জন ডানিলোভিচকে প্রস্তুত রাখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছেন তিনি।

    চিঠিতে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বাইরে গিয়ে শুধু ব্যক্তিগত ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশন থেকে উৎসারিত আর্থিক সম্পর্কের কারণে একটি সার্বভৌম সরকারের স্বাধীন তদন্তে হস্তক্ষেপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী (হিলারি) যদি তার ক্ষমতা ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে সেটা অগ্রহণযোগ্য।

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারির ক্ষমতার সঙ্গে তার পারিবারিক ফাউন্ডেশন মিলেমিশে গিয়ে থাকলে সেটাকে ‘সমানভাবে অসঙ্গত’ বলেছেন গ্র্যাসলি। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, এই তদন্ত আটকাতে প্রধানমন্ত্রীর ছেলের (জয়) বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব নেওয়ার হুমকি দেওয়ার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র দপ্তরের কোনো ভূমিকা ছিল কি না, তা নির্ধারণ করা জরুরি।

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়কার হিলারির ই-মেইল পরে প্রকাশিত হলে তাতে দেখা যায়, ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হাসিনা সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ঘোচাতে হিলারি ক্লিনটনের সহায়তা চাওয়ার ক্ষেত্রে ইউনূস নাছোড়বান্দা ছিলেন।

    ই-মেইল উদ্ধৃত করে গ্রাসলি লিখেছেন, হিলারি ক্লিনটনসহ পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা ইউনূসকে তার ব্যাংক থেকে সরানোর ঘটনাপ্রবাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেইসঙ্গে ‘ইউনূসের বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ বন্ধ করতে চাপ প্রয়োগের জন্য’ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন।

    বাংলাদেশি ওই তদন্তের বিষয়ে রাজস্ব বিভাগের নিরীক্ষার কথা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের কোনো কর্মকর্তা বলেছিলেন কি না এবং বিষয়টি পররাষ্ট্র দপ্তরের মহাপরিদর্শক বা বিচার বিভাগের পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছিল কি না, তা পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে জানতে চেয়েছেন সিনেটর গ্রাসলি; চিঠিতে সংযুক্ত পররাষ্ট্র দপ্তরের সব ই-মেইলের অবিকৃত কপিও চেয়েছেন।

    সেইসঙ্গে ইউনূসের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হলে সজীব ওয়াজেদকে নিয়ে রাজস্ব বিভাগের তদন্তের কথা বলার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জন ডানিলোভিচকে কমিটির মুখোমুখি করার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি।

    চিঠিতে বলা হয়েছে, জয়ের বক্তব্য অনুযায়ী ২০১০-১২ সময়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছিল। প্রায় প্রতিটি বৈঠকেই ইউনূস তদন্তের বিষয়টি সামনে এনে তা বন্ধ করতে তার উপর চাপ দেওয়া হত বলে তিনি বলছেন। ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে ঢাকায় সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি ও ড্যান মজীনা, সাবেক মিশন উপ-প্রধান জন ডানিলোভিচ ও ইউএসএআইডির প্রশাসক রাজিব শাহের নাম রয়েছে।

    ডানিলোভিচের সঙ্গে দুই বারের সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেছেন জয়, যেখানে মায়ের প্রভাব খাটিয়ে ইউনূসের বিষয়ে তদন্ত বন্ধ করতে ব্যর্থ হলে জয়ের বিরুদ্ধে রাজস্ব বিভাগের নিরীক্ষা হতে পারে বলে উল্লেখ করেছিলেন ডানিলোভিচ। জয়কে উদ্ধৃত করে চিঠিতে বলা হয়, ইউনূসের বিষয়ে বারবার উদ্বেগ জানিয়ে বার্তা পাঠানোর সময় পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রায়েই দুঃখ প্রকাশ করতেন। তারা যে শুধু শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাদের বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করতেন তা স্পষ্ট করতেন। উপরন্তু, কয়েক কর্মকর্তা তাকে বলেন যে ইউনূস সহায়তা চেয়ে ক্লিনটন ও সহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ফলে ইউনূসের পক্ষ হয়ে হস্তক্ষেপ করতে বাংলাদেশে দূতাবাসকে চাপ দিতেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিনটনের সহকারী।

    এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে সরানোর পর নিয়মিত ‘থ্রেট’ করত যুক্তরাষ্ট্র। বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে ইউনূসকে যখন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরানো হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন হিলারি ক্লিনটন; যিনি এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরেযান।
    সৃএঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম