• শিরোনাম

    তৃণমূলের রাজত্ব ধরে রাখতে নানা কৌশল বিএনপি নেতাদের

    | বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

    তৃণমূলের রাজত্ব ধরে রাখতে নানা কৌশল বিএনপি নেতাদের

    ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা শুরু করেছে বিএনপির হাইকমান্ড।এতে কমপক্ষে অর্ধশত প্রভাবশালী নেতাকে হারাতে হচ্ছে তৃণমূলের রাজত্ব। ইতিমধ্যেই এক ডজন কেন্দ্রীয় নেতা তৃণমূলের রাজত্ব ছেড়েছেন। বাকিরা ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

    তবে জেলা বা উপজেলার শীর্ষ পদ ছাড়লেও তৃণমূলের রাজত্ব ধরে রাখতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। দায়িত্ব ছেড়ে দিলেও পরিবারের সদস্য অথবা তাদের আস্থাভাজনদের জেলার শীর্ষ পদে বসাতে চালাচ্ছেন জোর তদবির।

    এরই মধ্যে কয়েকজন পদ ছাড়লেও ওই পদে নিজ স্ত্রী বা মেয়েকে বসিয়েছেন। আবার অনেকে রাজত্ব ধরে রাখতে কেন্দ্রের পদ ছেড়ে দেয়ার কথা চিন্তা করছেন।

    বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে আরও জানা গেছে, নতুন নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি সংযোজন করা হয়। যে কোনো মূল্যে তা বাস্তবায়নে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনড়।

    তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানকে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া।

    চেয়ারপারসনের এমন নির্দেশ পেয়ে একাধিক পদধারী প্রায় অর্ধশত নেতাকে ফোন করে পদ ছাড়ার অনুরোধ জানান তিনি। কেউ সাড়া না দিলে হাইকমান্ড এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও তাদের জানিয়ে দেয়া হয়। হাইকমান্ডের এমন বার্তা পেয়ে নড়েচড়ে বসেন একাধিক পদধারী অনেক নেতা। ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে পরামর্শ করে কেন্দ্রে না তৃণমূলে থাকবেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

    ইতিমধ্যে তৃণমূলের দায়িত্ব ছেড়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, টাঙ্গাইলের সভাপতি আহমেদ আজম খান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়াসহ আরও কয়েকজন।

    এর আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানসহ আরও কয়েকজন জেলার দায়িত্ব ছেড়ে দেন।

    জানতে চাইলে তৃণমূল পুনর্গঠনের প্রধান সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে নতুন উদ্যমে তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ চলছে।

    তিনি বলেন, নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে এবার এক নেতা একাধিক পদে থাকতে পারবেন না। কে কত প্রভাবশালী সেই বিষয় বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। একাধিক পদ ধরে রাখার কোনো কৌশলই কাজে আসবে না। কারণ এ ব্যাপারে হাইকমান্ড অনড়।

    তিনি বলেন, ইতিমধ্যে একাধিক পদধারী নেতাদের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। তাদের অনেকেই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। ইতিমধ্যে কয়েকজন একটি পদ রেখে বাকি পদ ছেড়ে দিয়েছেন। বাকিরা দ্রুত একাধিক পদ ছেড়ে দেবেন বলে আশা করছি।

    এক নেতার এক পদের কারণে দীর্ঘদিনের রাজত্ব হারাচ্ছেন অনেকে। প্রায় ২০ বছর ধরে ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আমানউল্লাহ আমান। শেষ পর্যন্ত তাকে জেলার দায়িত্ব ছাড়তেই হল। সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে জেলার নতুন কমিটি।

    স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস কর্তৃত্ব হারাচ্ছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির। দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী পটুয়াখালী জেলার সভাপতি। কেন্দ্রে থাকলে তাকে হারাতে হবে জেলার আধিপত্য। ঝালকাঠি জেলা সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়েছেন কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর।

    বরিশাল মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার কেন্দ্রের যুগ্ম-মহাসচিব নির্বাচিত হন। কয়েক যুগ ধরে তিনি বরিশালে রাজত্ব করছেন। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত সহজে মেনে নিতে পারছেন না তিনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চেয়ারপারসনের বিশেষ সুবিধা কাজে লাগাতে। তবে শেষ পর্যন্ত দীর্ঘদিনের রাজত্ব ধরে রাখা তার জন্য কঠিন হবে। নিজে পদে না থাকলেও রাজত্ব নিজের হাতে রাখার বিকল্প চিন্তাও করছেন তিনি। সেক্ষেত্রে আস্থাভাজন কাউকে মহানগরের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।

    ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকে হারাতে হচ্ছে গাজীপুর জেলার আধিপত্য। আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাট জেলার সভাপতির পাশাপাশি রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। দীর্ঘদিন ধরে জেলায় তার একক আধিপত্য। দুলুর বিকল্প কোনো নেতা জেলায় তৈরি হয়নি। তবে এবার তাকে নিজ হাতে গড়ে তোলা রাজত্ব ছাড়তে হচ্ছে।

    জানতে চাইলে মজিবর রহমান সরোয়ার যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব অবস্থাও বিবেচনায় নিতে হবে। আমি বরিশালের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে রাজি আছি। কিন্তু আমি চলে গেলে এখানে সাংগঠনিক শক্তি বাড়বে না কমবে সেই বিষয়টিও ভেবে দেখা উচিত। আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার মতো নেতা মহানগরীতে খুব কম আছে।

    এদিকে দীর্ঘদিনের আধিপত্য ধরে রাখতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন অনেক নেতা। জেলা বা উপজেলার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পর পরিবারের সদস্য অথবা আস্থাভাজন কাউকে ওই পদে বসানোর কৌশল নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে এই কৌশলের বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে।

    ১৯৯১ সাল থেকে সেনবাগ উপজেলার সভাপতি ছিলেন চেয়ারপারসনের বর্তমান উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। কয়েকদিন আগে তিনি ওই পদ ছেড়ে দেন। পদ ছেড়ে দিলেও উপজেলার আধিপত্য তার হাতেই আছে। নিজের জায়গায় মেয়ে তামান্না ফারুককে সভাপতি করা হয়েছে।

    সিরাজগঞ্জ বিএনপি মানেই ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। পুরো জেলায় তার একক আধিপত্য। কিন্তু এবার তাকে জেলার পদ ছাড়তে হয়। তবে আধিপত্য ঠিকই ধরে রেখেছেন। সম্প্রতি জেলার সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান টুকু। জেলার রাজত্ব ধরে রাখতে নিজের স্ত্রীকে জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। আগামীতে টুকুর স্ত্রীই জেলার সভাপতি হচ্ছেন বলে আলোচনা রয়েছে।

    আবার কেউ কেউ কেন্দ্রের পদ ছেড়ে দিয়ে তৃণমূলের রাজত্ব ধরে রাখতে চাইছেন। কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক পদ ছেড়ে দিয়ে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি হয়েছেন ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন।

    মানিকগঞ্জের সভাপতি হতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আফরোজা খান রিতা। আশরাফউদ্দিন নিজানও কেন্দ্রের পদ ছেড়ে দিয়েছেন তৃণমূলে থাকার লক্ষ্যে। রাজশাহী মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু তৃণমূলের আধিপত্য ধরে রাখতে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের পদ ছেড়ে দিতে পারেন বলে জানা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার সভাপতি মশিউর রহমান তৃণমূলের আধিপত্য ধরে রাখতে শেষ মুহূর্তে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন।

    নরসিংদী জেলার সভাপতি খায়রুল কবির খোকন জানান, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে কখনও যাইনি, ভবিষ্যতেও যাব না। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও কিছুদিন জেলার দায়িত্বে থেকে সাংগঠনিকভাবে দলকে গুছিয়ে সরে যাওয়ার কথা কেন্দ্রকে জানিয়েছি। আশা করি দলের স্বার্থেই তারা এ সময়টুকু আমাকে দেবেন।

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম