• শিরোনাম

    মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানীতে আমার কেন এত অনীহা ?

    | বুধবার, ০৯ নভেম্বর ২০১৬

    মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানীতে আমার কেন এত অনীহা ?

    মালয়েশিয়া যতটুকু দেয়
    তার চেয়েও বেশী নেয়।

    মালয়েশিয়ার শিল্প প্রতিষ্ঠান যখন বিদেশী শ্রমিক সংকটে ছটফট করছে তখন আমার মনে পড়ে জেলে জঙ্গলে আশ্রিত শ্রমিকের অসহায় মুখটি। কারন যে বিদেশী শ্রমিকদের উপর এত জুলুম অত্যাচার নির্যাতন চলছে, লেভীর নামে শ্রমিকের টাকা হাতিয়ে নেয়া, পথে ঘাটে পুলিশের হয়রানী, দালাল দিয়ে কৌশলে অর্থ নেয়ার কৌশল, তার উপর জেল জুলুম নির্যাতন কত কিছু। কত রঙ্গলীলাই না চলছে এই বিদেশী শ্রমিক নিয়ে। ওদের কি মানুষ মনে করছে মালয়েশিয়া?

    অথচ এই বিদেশী শ্রমিকরাই হচ্ছে মালয়েশিয়া অর্থনীতির অক্সিজেন। এখন সে অক্সিজেন সংকটে আছে মালয়েশিয়া। একদিকে টাল মাটাল অর্থনীতি, আরেকদিকে শ্রমিক সংকট। আর এ অক্সিজেন পূরন করতে বাংলাদেশী শ্রমিক অপরিহার্য্য মালয়েশিয়ায়। কারন, বিশ্বের কোন দেশই মালয়েশিয়াকে এখন আর শ্রমিক দিতে রাজী নয় তাদের অসাধু অবস্থানের কারনে। যতটুকু বুঝি বাংলাদেশও নয়। কিন্তু বাংলাদেশের একশ্রেনীর মানুষ বিশেষ করে দালাল এজেন্টরা মালয়েশিয়ায় লোক নিবে শুনলেই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে খুশীতে মেতে উঠে। না দেশপ্রেমের তাগিদে নয়, তাদের চৌদ্ধগোষ্ঠীর কামাইয়ের মহানন্দেই এ উল্লাস। আর আমাদের মিডিয়া তাদের আরো পাগল বানিয়ে ছাড়ে। কিন্তু আমি একটুও খুশী হই না। কারন আমি চাই এই অক্সিজেনের অভাবে মালয়েশিয়া ধুকে ধুকে মরুক আর অনুধাবন করুক বাংলাদেশী শ্রমিক কত বেশী দরকার মালয়েশিয়ার জন্য। যে মালয়েশিয়া আমাদের জন্য মারনেশিয়া হয়ে শ্রমিকদের কৃতদাস বানিয়ে রেখেছে সে মালয়েশিয়ার জন্য কিছুটা শিক্ষা দরকার আছে। সকালে আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর সাথে চা বিস্কুট খেয়ে বিকেলে চুক্তিতে সই করে আর রাতে সে চুক্তি বাতিল করে। আমি সে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে আপত্তি করছি। কারন, আমার দেশকে অপমান করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে ওরা। একজন দেশপ্রেমিক হিসাবে মালয়েশিয়ার কাছে আমাদের নতজানু আর আশা করি না। বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষ না খেয়ে নেই। এছাড়া আহামরি কি এমন আছে মালয়েশিয়ায়? শ্রমিকরা যা কামায় সেটা তো মালয়েশিয়াই ছলে বলে কৌশলে রেখে দিচ্ছে। আর গা বাঁচিয়ে যেটুকু সে দেশে পাঠাচ্ছে তাতে দেশে থাকলে দিব্যি এর চেয়ে ভালো থাকতো। 14963121_999615403494927_4562153373446736253_n
    তাই আমি জানি না আমার কথাগুলো কে কিভাবে নিবে। একদিন এই মালয়েশিয়ায় লোক নেবার জন্য কত আকুতি মিনতি করেছি, কত নিউজ লিখেছি। আর আজ সেই আমিই বলছি- অনেক হয়েছে, আর নয়। আর নয় মালয়েশিয়া। সুন্দরী সাপের রূপে আমরা মুগ্ধ হয়ে যেন ভুলে না যাই সুন্দরীর বিষাক্ত ছোবলের কথা। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেশ এই বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছে। জনশক্তি রপ্তানীর নামে আমাদের আত্মসন্মান যেন বিকিয়ে না দেই। জানি যুক্তি অনেক আসবে, কিন্তু আমার যুক্তি একটাই- আমরা ঘুরে দাঁড়ালে, অবশ্যই নত হবে ওরা। মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক অক্সিজেনে বাংলাদেশী শ্রমিকের বিকল্প আর নেই। অনেকের চেয়ে আমি এটা বুঝি একটু বেশী। কারন, এই মালয়েশিয়াকে আমি চিনি ২৬ বছর। খুব সামনে থেকে দেখেছি কাদের রক্ত ঘামে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে আজকের এই মালয়েশিয়া। এটাও দেখেছি মালয়েশিয়ায় শ্রমিক এসে কি পেয়েছে আর কি হারিয়েছে। এদেশে অনেকের সোনার যৌবন ধ্বংস করেও ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেনি। হিসাবের খাতাটা মিলছে না কোনভাবেই। কাজেই মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানীর ঢেকুর তুলে লাভ নেই। লাভ হবে দালালের। আর শ্রমিকের লাভটা হবে জমি জমা বিক্রি করে বিদেশভ্রমনের স্বাদ পূরন। তারপর হয়তো মাথা থেকে ‘বিদেশ’ পোকাটা দূর হবে।

    মালয়েশিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক

    গৌতম রায়

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম