• শিরোনাম

    ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

    | রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

    ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

    মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটের ফ্লাডলাইট ভেদ করে অস্তমিত সূর্যকে ছাপিয়ে যেন নতুন এক সূর্যোদয়! মিরাজ-সাকিবের ঘূর্ণি বলের মায়া যাদুতে ইতিহাসের কপালে চুমো বাংলাদেশের। ইংল্যান্ডকে ১৬৪ রানে অলআউট করে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টটি ১০৮ রানে জিতে নিয়েছে টাইগাররা। রোববার ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট জয়ের দিনে সিরিজটাও ১-১ এ ড্র করেছে স্বাগতিকরা।

    চট্টগ্রাম টেস্টে খুব কাছে থেকে ফিরতে হয়েছিল। সেটি যেন আরো বেশি করে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করেছিল টাইগার শিবিরকে। ঢাকা টেস্টের প্রথম আড়াই দিনে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সমানে সমান লড়াই জমেছিল। তাতে কিছুটা দুশ্চিন্তা যোগ করেছিল কুক-ডাকেট জুটি। কিন্তু মিরাজ-সাকিবের ঘূর্ণিতে এরপরই ইংল্যান্ড শিবিরকে নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করেছে বাংলাদেশ।

    ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির পরপরই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। তাতে চট্টগ্রাম টেস্টের পর হোম অব ক্রিকেটেও রোমাঞ্চ ছড়ানোর মঞ্চ তৈরি করে ইংল্যান্ডকে ২৭৩ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল মুশফিকরা। এই লক্ষ্যে টপকে মাঠ ছাড়তে হলে এশিয়ার মাটিতে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ডই গড়তে হতো সফরকারীদের। সেই পথে শতরানের জুটি গড়ে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিলেন দুই ইংলিশ উদ্বোধনী অ্যালিস্টার কুক ও বেন ডাকেট। এরপরই মিরাজ ও সাকিবের ঘূর্ণি জাদু। দুজনে ১০টি উইকেট ভাগ করে নিয়েছেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা মিরাজ ৭৭ রানে ৬টি এবং সাকিব ৪৯ রানে ৪টি উইকেট তুলে নিয়েছেন।

    সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মিরপুরে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ২২০ রান তুলে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪৪ রানে ৮ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড আদিল রশিদ ও ক্রিস ওকসের দৃঢ়তায় নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রান তুলে ২৪ রানের লিড নেয়। পরে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৯৬ রানে থামে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। যাতে ইংল্যান্ডের সামনে ২৭৩ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়। সেটি তাড়া করতে যেয়েই দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৪ রানে গুটিয়ে গেছে ইংলিশরা।

    জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২২ রানে জেতা ম্যাচে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ২৯৩ ও ২৪০ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। দুবারই তাদের ১০টি করে উইকেট তুলে নেওয়ার পর ঢাকাতেও প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের গুটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে টাইগার বোলাররা। তাই ছুঁড়ে দেওয়া লক্ষ্যে নির্ভর করতে বোলারদের দিকেই তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। যে পথে ইংলিশদের একটি দুর্বলতাও ছিল স্বাগতিকদের পক্ষে।

    আগে ইংল্যান্ড যে এশিয়ায় মাটিতে ২০৯ রানের বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি। ২০১০ সালের সেই জয়টি অবশ্য বাংলাদেশের বিপক্ষেই এসেছিল। মিরপুরেই অতিথিরা জিতেছিল ৯ উইকেটে। সব মিলিয়ে এশিয়ার মাটিতে মাত্র দুবারই দুইশর বেশি রান তাড়া করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে ইংলিশরা। বাকি জয়টি সেই ১৯৬১ সালে, লাহোর টেস্টে; সেবার স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০৮ রান তাড়া করে জিতেছিল ইংল্যান্ড। হোম অব ক্রিকেটে কঠিন লক্ষ্যের পেছনে ছোটার দিনে তাই নিজেদের ইতিহাস বদলানোর সংকল্পই যেনো করেছিল কুকের দল।

    যাতে চা বিরতির আগেই দ্রুতগতিতে একশো রান তুলে ফেলেন অ্যালিস্টার কুক ও বেন ডাকেট জুটি। কিন্তু বিরতির পরই ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। ফিরে প্রথম বলেই বেন ডাকেটকে সাজঘরে পাঠান মিরাজ। বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ৫৬ রানের ঝলমলে একটি ইনিংস খেলেছেন ডাকেট। পরের ওভারের প্রথম বলেই জো রুটকে (১) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে সাকিব জানিয়ে দেন এবার আমাদের পালা।

    জোড়া আঘাতে চাপের মাঝে রিভিউ নিয়ে একবার উইকেটে টিকে গেছেন অধিনায়ক কুক। পরে ফিফটি তুলে নিয়েছেন। কিন্তু টাইগার ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয়ে সতীর্থদের সঙ্গে আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ না দেওয়া এড়াতে পারেননি। মিরাজের বলেই মুমিনুলের দারুণ এক ক্যাচ হয়ে আউট হয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক (৫৯)।

    কুকের ফেরার আগেই অবশ্য আরো দুই ইংলিশকে সাজঘরের পথ দেখান মিরাজ। গ্যারি ব্যালান্সকে (৫) তামিমের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠানোর পর একই ওভারে শূন্য রানে মঈন আলিকেও ফিরিয়েছেন এই তরুণ অফস্পিনার। ইংল্যান্ড সেই চাপ থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি।

    কুককে আউট করে এই টেস্টে ১০ উইকেট পূর্ণ করেছেন মিরাজ। পরে জনি বেয়ারস্টোকে (৩) ফিরিয়ে পূর্ণ করেছেন পাঁচ উইকেটও। আর স্টিভেন ফিনকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দুই টেস্টের ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার দেখেছেন ৬ উইকেট পাওয়ার মুখ। সঙ্গে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। তার সেরা প্রদর্শনীটি এখন ৬/৭৭!

    দুর্দান্ত বোলিংয়ের দিনে ১৩০ বছরের পুরনো বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছেন মিরাজ। অভিষেকের পর দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট নেয়ার কীর্তি এখন তার। অভিষেকের পর প্রথম দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট নেয়ার বিশ্বরেকর্ড এতদিন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক বাঁহাতি পেসার জন জেমস প্যারিসের দখলে ছিল। ১৮৮৬ সালে এই কীর্তি গড়েন তিনি। ১৩০ বছর পর সেই কীর্তিকে ছাপিয়ে গেলেন মিরাজ। তার উইকেট এখন ১৯টি। চট্টগ্রামে অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে (৬+১) ৭ উইকেট নেয়ার পর ঢাকা টেস্টে (৬+৬) উইকেট নিয়েছেন এই তরুণ।

    সঙ্গে মাত্র দুই টেস্টে ৩ বার ৫ বা ততোধিক উইকেট নিয়ে অভিজাত এক ক্লাবেও জায়গা করে নিয়েছেন মিরাজ। তার আগে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম দুই ম্যাচে তিনবার ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়া অপর চারজন হলেন- নরেন্দ্র হিরওয়ানি, ক্লারি গ্রিমেট, টম রিচার্ডসন, সিডনি বার্নেস ও রডনি হগ।

    মিরাজের দাপটের দিনে ভুলে গেলে চলবে না পরীক্ষিত সাকিব আল হাসানকেও। এদিন ৪ উইকেট নিয়ে নামের প্রতি সুবিচার করেছেন তিনিও। প্রথম ইনিংসে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা আদিল রশিদ (০), জাফর আনসারি (০), জোর রুট (১) ও পুরো সিরিজেই ভোগানো বেন স্টোকসকে (২৫) সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন তিনি।

    এর আগে সকালে ৩ উইকেটে ১৫২ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে আলগা শটে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। যদিও রোববার দিনের শুরুটা বেশ সতর্কতার সঙ্গেই করেছিলেন ইমরুল ও সাকিব। আনসারির করা ৩৭তম ও মঈন আলির করা ৪২তম ওভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে বেঁচেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ইনিংসটাকে ১২০ বলে ৭৮ রানের বেশি এগিয়ে নিতে পারেননি। মঈনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন।

    পরে রশিদের দারুণ এক টার্ন বলে রক্ষণাত্মক খেলেও সাকিবের স্ট্যাম্প ভেঙে যায়। ফেরার আগে ৪১ রান করেছেন তিনি। তাকে দ্রুত অনুসরণ করেন অধিনায়ক মুশফিক (৯)। রশিদের সোজা আসা বলই ঠিকভাবে সামলাতে না পেরে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে সাব্বির (১৫) ফিরে গেলে বড় লিডের আশাও ডুবতে বসে স্বাগতিকদের।

    এরপরও যে কয়েকটা রান উঠল তাতে থাকল সমালোচনার মুখে থাকা শুভাগত হোমের অবদান। এদিন ২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের হয়ে ৪টি উইকেট নিয়ে সেরা ছিলেন আদিল রশিদ। এছাড়া বেন স্টোকস ৩টি ও জাফর আনসারি ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। পরে যাদের ছাপিয়ে নায়ক হয়ে উঠেছেন মিরাজ ও সাকিবরা। মিরাজ তো ম্যাচ সেরার সঙ্গে সিরিজ সেরাও হয়েছেন।

    সূএ-পরিবর্তন

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম