• শিরোনাম

    আখাউড়ায় পুলিশের মাদকবিরোধী সাড়াঁশি অভিযানে গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় অর্ধশত মাদককারবারী !!

    হান্নান খাদেম ঃ | মঙ্গলবার, ০৪ এপ্রিল ২০১৭

    আখাউড়ায় পুলিশের মাদকবিরোধী সাড়াঁশি অভিযানে গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় অর্ধশত মাদককারবারী !!

    আখাউড়ায় পুলিশ প্রশাসনের মাদক বিরোধী আকস্মিক সাড়াঁশি অভিযানে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মাদক কারকারী ও মাদকসেবীরা। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে প্রায় একশ সন্দেহভাজন মাদককারবারী, মাদকসেবী ও সন্ত্রাসীকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া কয়েক মাসের ব্যবধানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৩ মাদককারবারী নিহত হওয়ার বিষয়টি মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করেছে।

    জানা যায়, গত ১৭ মার্চ আখাউড়া কৌড়াতলী গ্রামের মোঃ মরহম আলীর পুত্র চিহ্নিত মাদককারবারী দেলোয়ার হোসেন দেলু (৩২) বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। কসবার সৈয়দাবাদ এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে অন্তত ১১টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। তবে দেলুর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এদিকে গত বছরের ২৩ আগষ্ট কসবার গোপীনাথপুরে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রহিজ উদ্দিন বন্দুক যুদ্ধে নিতহ হয়। মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে অন্তত ১৩টি মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। যদিও পরিবারের দাবী এটি হত্যাকান্ড।

    সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ ভোরে সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের ভাতশালা স্টেশন কথিত বন্দুকযুদ্ধে কাউছার ভূইয়া (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়। কাউছার ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কান্দিপাড়ার মোঃ আব্দুল রাজ্জাক ভূইয়ার পুত্র। তার বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি পৌরশহরের এক সন্দেহভাজন মাদককারবারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে বন্দুকযুদ্ধের শিকার হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে। তবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
    এসব ‘বন্দুকযুদ্ধ’ এবং পুলিশের আকস্মিক মাদক বিরোধী অভিযানের কারণে মাদককারবারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার এড়াতে উপজেলার প্রায় অর্ধশত সন্দেহভাজন মাদককারবারী গা ঢাকা দেয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ পাড়ি জমিয়েছে বিদেশে। কেউ কেউ প্রাণভয়ে সীমান্ত পথে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে গেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। কমে গেছে উপজেলার চিহ্নিত কিছু এলাকায় মাদক সেবীদের আনাগোনা। পুলিশের এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে সচেতন মহল। স্বস্তি নেমে এসেছে অভিভাবকদের মাঝে।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী ৭/৮টি গ্রামে মাদকচোরাকারবারীরা দীর্ঘ দিন ধরে দাপটের সাথে মাদক ব্যবসা করে আসছে। উপজেলার উত্তর, দক্ষিণ, মোগড়া ও মনিয়ন্দ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৭/৮টি গ্রামে অর্ধশত মাদকের আস্তানা গড়ে উঠেছে। এসব আস্তানায় প্রকাশ্যে চলতো ইয়াবা, ফেন্সিডিল, মদ-গাজাসহ নানা মাদকদ্রব্য বেচাকেনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকসেবীরা এসব স্পটে এসে মাদক সেবন করতো। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় চলে এসব মাদকের ব্যবসা। কয়েকজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসায় মদদ দেয়ার অভিযোগ আছে। সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় সীমান্তবর্তী আখাউড়াকে মাদকের নিরাপদ ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার করতো মাদককারবারীরা।

    এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ এসব জানলেও কেউ মুখ খুলতো পাছে বিপদে পড়ে যায়। তবে মাদকের প্রধান টার্গেন তরুন সমাজ হলেও সেই তরুন সমাজের মধ্যেই মাদক বিরোধী মনোভাব লক্ষ্য করা যেতো।
    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের বছরের ১০ অক্টোবর সৈয়দ তানবীর শাহ্ ফেসবুকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বরাবরে একটি খোলা চিঠি পোষ্ট করে। ওই পোষ্টে আখাউড়ায় মাদকের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরা হয়। এরপর থেকে ওই পোষ্ট থেকে মাদক বিরোধী প্রচারণা চালানো হয়। বিগত বছরের ১ নভেম্বর আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হকের নিকট একটি স্মারকলিপি দেয় আমিনুল হক সাজি ও তানবীর শাহ্ নেতৃত্বে মাদক বিরোধী আন্দোলনের নেতারা। ওই স্মারকলিপিতে আখাউড়াকে মাদকমুক্ত করার দাবী জানানো হয়।
    এরপর মাদক বিরোধী আন্দোলনের কর্মী ছাত্র-যুবকেরা মাদক বিরোধী মানববন্ধন, সাইকেল র‌্যালি করে। ‘মাদকমুক্ত আখাউড়া চাই’ স্লোগানে দেয়াল লিখনের মাধ্যমে জনসচেতনা সৃষ্টি করে। ধীরে ধীরে মাদকবিরোধী জনমত গড়ে উঠে। ফেব্রুয়ারী মাসের ২ তারিখ স্মারকলিপি প্রদানকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে নবনিযুক্ত পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে পুলিশের (আখাউড়া সার্কেল) সহকারী পুলিশ সুপার মো. পারভেজ আলম চৌধুরর নিকটও একটি স্মারকলিপি দেয় মাদক বিরোধী আন্দোলনকারীরা। তিনিও আশ্বাস দেন মাদক চোরাকারবারি ও সেবনকারীকে গ্রেপ্তারে পূর্বাঞ্চল রেলওয়েজুড়ে সাঁড়াশি অভিযানও চালানো হব।
    তবে ১০ ফেব্রুয়ারী উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক (কসবা- আখাউড়ার সংসদ সদস্য) আখাউড়াকে মাদক মুক্ত উপজেলা করার ঘোষণা দিলে মাদকবিরোধী এ আন্দোলন তীব্রতা লাভ করে। নড়েচড়ে উঠে প্রশাসন।
    সর্বশেষ গত ২ মার্চ আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে মাদক বিরোধী সমাবেশে পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান মাদকব্যবসায়ীদের প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বক্তৃতা দেন। কোন রকম রাখঢাক না করে প্রকাশ্য সমাবেশে বলেন, মাদক ব্যবসা করে কেউ নিরাপদে থাকতে পারবেনা। মাদক ব্যবসায়ীদের আস্তানা গুড়িয়ে দেওয়া হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হবে। কয়েকটি বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনার ইঙ্গিত করে বলেন, মৃত্যুর সংখ্যা প্রয়োজনে বৃদ্ধি পাবে। মন্ত্রী ও পুলিশ সুপারের এমন কঠোর হুশিয়ারির পর আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। শুরু করেন মাদক বিরোধী অভিযান।

    মাদক বিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র সৈয়দ তানবীর শাহ্ বলেন, মাদক নির্মূলে জনসচেতনতা তৈরীর লক্ষে পৌর শহরসহ উপজেলা বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, গনস্বাক্ষর কর্মসূচি, স্মারক লিপি, এলাকায় মাদক বিরোধী সভা, কমিটি গঠন, সাইকেল র‌্যালিসহ বেশ কয়েটি কর্মসূচি পালন করেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক কাউন্সিলিং, চিত্রপ্রদর্শনী, এলাকাভিত্তিক সভা সমাবেশ ও কমিটি গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
    আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূইয়া পুলিশের এ মাদকবিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলেন আমি নিজেও মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করছি। আমার এলাকায় যে সকল ব্যক্তি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তাদেরকে সাবধান করেছি আর যেন মাদক ব্যবসা না করে। বহিরাগত মাদকসেবীরা এ এলাকায় আসলে তাদেরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ মাদক বিরোধী টিম কাজ করছে।

    আখাউড়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোশারফ হোসেন তরফদার বলেন, মাদক ব্যবসার সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের নামের তালিকা আমাদের হাতে আছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
    মাদকের আস্তানা গুড়িয়ে দেয়া হবে। মাদকব্যবসায়ীরা মাটির নিচে চলে গেলেও সেখান থেকে তাদেরকে বের কনে এনে শাস্তি দেয়া হবে।
    আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শামছুজ্জামান বলেন, মাদক সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীদের আর রেহাই করা হবে না। তিনি মাদক ব্যবসায়ীদেরকে আত্মসর্মন করার আহবান জানান।

    Comments

    comments

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ

  • ফেসবুকে চিনাইরবার্তা.কম